সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ৩ দিনের জন্য স্থগিত

দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে কয়েকটি সংগঠনফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসন করাসহ ৮ দফা দাবিতে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি তিন দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এই বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক প্রসেনজীৎ কুমার হালদার। তিনি জানান, সামনে ১৫ আগস্ট, সে কারণে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, তা সংবাদ সম্মেলন কিংবা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জানানো হবে।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার-ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসনসহ মোট ৮ দফা দাবিতে গত শুক্রবার প্রথম শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন সংগঠনের কয়েক হাজার মানুষ। একই দাবিতে পরদিন শনিবারও শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রোববার তাঁরা প্রদীপ প্রজ্বালন করেন। গতকাল সোমবারও শাহবাগ অবরোধ করেন তাঁরা। আজ বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাঁদের কর্মসূচি পালন করার কথা থাকলেও তা তাঁরা করেননি। এই ৮ দফা দাবিতে রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ

এদিকে আজ বেলা ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ৮ দফা দাবিতে বিক্ষোভরত ব্যক্তিদের প্রধান সমন্বয়ক প্রসেনজীৎ কুমার হালদার, সমন্বয়ক নিহার হালদার, অনুপম দাস ও হৃদয় চন্দ্র গাইন। সমন্বয়কদের সঙ্গে আরও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী। বেলা ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাঁরা আলোচনা করেন। সাক্ষাতের সময় তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার চিত্র এবং ৮ দফা দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি তুলে ধরেন।

সাক্ষাতের সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, আইনবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং কয়েকটি দপ্তরের সচিবরা।

৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর বিচার ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের’ মাধ্যমে করা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি করা প্রভৃতি।

সাক্ষাতের সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবিগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান প্রসেনজীৎ কুমার হালদার। সাক্ষাতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রসেনজীৎ হালদার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যে দেশে মন্দির পাহারা দিতে হয়, তেমন দেশ তিনি চান না। সবকিছু সংস্কার করার কথা তিনি বলেছেন।’