রাজধানীর দক্ষিণখান
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে থানা আ.লীগের সম্মেলন
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় পাশাপাশি পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে গতকাল সোমবার আয়োজন করা হয়েছিল থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সস্মেলন এবং সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকদের অনেকে। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। তাঁরা বলছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন আয়োজন করাই যেত। সম্মেলনের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার বিষয়টি ঠিক হয়নি। তবে অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশির ভাগই নাম প্রকাশ করে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
দক্ষিণখানের চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় এস এম মোজাম্মেল হক শিক্ষা কমপ্লেক্সের ভেতরে পাশাপাশি পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশাল একটি মাঠের চারদিকে রয়েছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকতেই হাতের ডানে পড়বে এস এম মোজাম্মেল হক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। এ ছাড়া কমপ্লেক্সের ভেতরে আরও রয়েছে উত্তরা আনোয়ারা মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, এমারত হোসেন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, এস এম তোফাজ্জল হোসেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং এস এম মোজাম্মেল হক কিন্ডারগার্টেন। এই পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।
দক্ষিণখান থানাসহ ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে এস এম মোজাম্মেল হক শিক্ষা কমপ্লেক্সের ভেতরের মাঠে বিশাল প্যান্ডেল টাঙানো হয়। গতকাল দুপুরে সেখানে দেখা যায়, সম্মেলনে পদপ্রত্যাশী নেতাদের পোস্টারে ঢাকা পড়ে গেছে পাঁচতলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভবন। মিছিল নিয়ে মাঠে জড়ো হচ্ছেন নেতা–কর্মীরা। শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসেন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সম্মেলন আয়োজন ও তাতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল রাতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে এ বিষয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি ওই বার্তার কোনো উত্তর দেননি।
এ সম্মেলনের জন্য ‘বিশেষ কারণে’ সোমবার স্কুল বন্ধ থাকবে—এমন ঘোষণা অবশ্য আগেই দেওয়া হয়েছিল। এমারত হোসেন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেছে, গত বৃহস্পতিবার শিক্ষকেরা ছুটির (সোমবার) কথা জানিয়েছিলেন। শিক্ষকেরা মুখে না বললেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানের কারণে স্কুল ছুটি দেওয়ার বিষয়টি সবাই জানতেন।
অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে এস এম তোফাজ্জল হোসেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলন শুরুর সময় বেলা তিনটা দেওয়া হলেও এর আগে থেকেই দলীয় নেতা-কর্মীরা জমায়েত হতে শুরু করেন। তখন আসলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মতো পরিবেশ পরিস্থিতি থাকে না। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের এমন সম্মেলনগুলোতে সাধারণত বিশৃঙ্খলাও হয়। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উত্তরা আনোয়ারা মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহিম মোল্লার সঙ্গেও এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছে
প্রথম আলো। কিন্তু একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।
দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে প্রথম আলো। তিনি নতুন কমিটিরও সভাপতির পদপ্রত্যাশী।
এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ২৯ জুলাই, শুক্রবার। কিন্তু তারিখ এগিয়ে এনে ২৫ জুলাই নির্ধারণ করা হয়। এ সিদ্ধান্ত মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়ে থাকেন। থানার নেতাদের এ বিষয়ে কিছুই করার নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দলের সম্মেলন আয়োজন নিয়ে তিনি নিজেও বিব্রত বলে প্রথম আলোকে জানান।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সম্মেলন আয়োজন করা নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৮ আসন) হাবিব হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ সম্মেলনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
সংসদ সদস্য হাবিব হাসান দক্ষিণখান থানা ও চারটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
যে স্কুলমাঠের সামনে সম্মেলন হয়েছে, সেই এমারত হোসেন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার থেকেই মাঠে গর্ত খোঁড়া, বাঁশের খুঁটি বসানো, প্যান্ডেল তৈরিসহ নানা প্রস্তুতি শুরু হয়। একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়টি দৃষ্টিকটু।