ইজিবাইক নিয়ে যেসব প্রশ্ন করে না গণমাধ্যম

গত কয়েক বছরে ইজিবাইক প্রশ্নে বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ম করে ব্যাটারিচালিত বাহনকে রীতিমতো ‘ভিলেন’ বানানো শুরু করেছে।

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মহাসড়কে ওঠায় যানগুলো আটকে রেখেছে পুলিশ। গাজীপুরের টঙ্গীর দুটি ডাম্পিং স্টেশনে এমন গাড়ি আটকে আছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। সম্প্রতি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসংলগ্ন বাটাগেট এলাকায়
ছবি: আল-আমিন

ভারতীয় টেলিভিশন সাংবাদিক রাজদীপ সারদেসাই করোনা মহামারি শুরুর পর একটি টিভি টক শোতে সাংবাদিক পি সাইনাথকে প্রশ্ন করেছিলেন, হাজার হাজার মানুষ এই ভয়ংকর মহামারির মধ্যেও গাজিয়াবাদ স্টেশন থেকে শত শত মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরছে কেন, ওদের কি করোনার ভয় নেই?

সাইনাথ উত্তর দিয়েছিলেন, রাজদীপ আপনি ভুল প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্নটা হওয়া উচিত ছিল, এত বিশালসংখ্যক মানুষ তাদের কৃষিজমি ফেলে দিল্লি-মুম্বাই শহরে এসেছিলই-বা কেন? বিহার, ঝাড়খন্ড বা পাঞ্জাবের কৃষক শেষ পর্যন্ত কৃষিকাজ করে টিকে থাকতে পারেনি কেন? তারা বসতভিটা ফেলে শহরে আসতে বাধ্য হলো কেন? গণমাধ্যমের জরুরি কাজ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা।

গত কয়েক মাস হলো গাজীপুরের বাটাগেট, টিঅ্যান্ডটি মাঠ এখন ইজিবাইক ধরপাকড়ের এক বিশাল গোডাউনে পরিণত হয়েছে। এসব মাঠে সব মিলিয়ে আটকে রাখা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ইঞ্জিনচালিত রিকশা আর ইজিবাইক। অর্থাৎ ৬ হাজার রিকশাচালক, ভ্যানচালক আর ইজিবাইকচালকের কয়েক মাস ধরে কোনো রোজগার নেই। অতিরিক্ত যানজটের কারণে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ নাকি এই ধরপাকড় করেছে।

এরই মধ্যে গাড়ি ছাড়াতে চাঁদাবাজির অভিযোগও আছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, গরিব মানুষের ওপর ঘটে যাওয়া এই অন্যায়গুলোকে তুলে না ধরে, অনেক গণমাধ্যম বরাবরই এই ধরপাকড় অভিযানকে সমর্থন জোগাচ্ছে।

গণমাধ্যম এই প্রশ্ন ভুলেও করছে না যে যারা এসব ইজিবাইকের পার্টস (যন্ত্রাংশ) আমদানি করছে, তাদের ধরপাকড় করা হয় না কেন? সারা দেশের বিলাসবহুল শোরুমগুলোতে দেদার ইজিবাইকের পার্টস বিক্রি হচ্ছে, অথচ সেখানে নিষেধাজ্ঞা নেই কেন? তাদের সঙ্গে প্রশাসনের বোঝাপড়াটা কী? ‘কটা ব্রিফকেসের’ বোঝাপড়া? এ বিষয়ে গণমাধ্যম চুপচাপ আর কী।

গণমাধ্যমের জরুরি কাজ পর্যবেক্ষণ করা, সমস্যার গভীরে যাওয়া, বিশ্লেষণ করা এবং অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলো সামনে আনা। কিন্তু গত কয়েক বছরে ইজিবাইক প্রশ্নে বাংলাদেশের গণমাধ্যম কী করল? তারা নিয়ম করে ব্যাটারিচালিত বাহনকে রীতিমতো ‘ভিলেন’ বানানো শুরু করল। ইজিবাইকে যানজট হয়, ইজিবাইক বিদ্যুৎ ‘খায়’, ইজিবাইক অবৈধ।

বিশেষজ্ঞদের বারবার চিহ্নিত করে দেওয়া যানজটের কাঠামোগত কারণগুলোকে এড়িয়ে, যানজটের প্রধান ‘খলনায়ক’ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে খেটে খাওয়া নিরীহ ইজিবাইক চালককে। ১০ বছর ধরে গাজীপুরের রাস্তাগুলোতে মেগা প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে, ভয়াবহ যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ, তো সেই মেগা প্রকল্পের মেগা জট লাগানোর দায়ও ছোট ইজিবাইকচালকের? বিদ্যুৎ খাতের এক দশকের ভয়াবহ হরিলুটের বাস্তবতা এড়িয়ে একজন অটোরিকশাচালককে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে ‘বিদ্যুৎখেকো’ হিসেবে। অর্থাৎ ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষকে টোকাটি না দিয়ে ক্ষমতাহীন, কাজ না পাওয়া লোকটির বিরুদ্ধে একের পর এক রায় দিয়ে গেল এ দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল।

খেয়াল করুন, প্রভাবশালী পার্টস আমদানিকারকের বিরুদ্ধে নয়, বিলাসবহুল শোরুম ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নয়, নতুন যে কোম্পানিটি প্রতি মাসে কয়েক হাজার করে ইজিবাইক বাজারে আনার ঘোষণা দিল, তার বিরুদ্ধেও নয়, গণমাধ্যমের অবস্থান শুধু লুঙ্গি পরা চালকটির বিরুদ্ধে!

‘গণমাধ্যম’ যদি সত্যিকার অর্থেই গণমাধ্যম হতো, তাহলে ইজিবাইক প্রশ্নে তাদের ভূমিকা কেমন হতে পারত? ইজিবাইক বাড়ল কেন, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল কেন, কারা কিনছে, কেন কিনছে, চাহিদা হঠাৎ বাড়ল কেন, স্থানীয় উৎপাদন হঠাৎ বাড়ল কেন, আমদানি হঠাৎ বাড়ল কেন, বিকল্প ছিল কি না—এসব অনুসন্ধানের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যেত বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের এক নিদারুণ আর্থসামাজিক বাস্তবতা।

স্থানীয় ইজিবাইকশিল্পের দ্রুত বিকাশের গল্পটি বুঝতে হলে তো প্রশ্ন করতে হতো, মানুষ কেন গ্রাম থেকে শহরে আসে, আবার কেন গ্রামে ফেরত যায়, তারপর আবার কেন গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে অটোরিকশা চালায়?

ওরা খেতমজুর হয় না কেন?

ইজিবাইকচালকদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ হলো, গ্রামে খেতখামারে কাজ করার লোক পাওয়া যায় না, এই লোকগুলো শহরে এসে জঞ্জাল বাড়ায়! এটা ঠিক যে প্রতিবছরই ফসল কাটার মৌসুমে খেতমজুরের সংকট তৈরি হয়। কিন্তু এর মানে কি এই যে দেশের চারদিকে শুধু কাজ আর কাজ? ভুলে গেলে চলবে না, খেতের কাজের চাহিদা সারা বছর থাকে না।

যেমন বর্ষাকালে ধান রোপণের জন্য লোক লাগে, এক-দেড় বিঘা জমিতে বড়জোর তিন-চারজন লোক কাজ পায়। কিন্তু বর্ষাটা শেষ হলেই পরের পাঁচ মাস কোনো কাজ নেই। ওই পাঁচ মাস কী খায়, কীভাবে বাঁচে খেতমজুর? ইজিবাইকচালকদের খেতমজুর হওয়ার পরামর্শদাতাদের সেই মাথাব্যথা নেই।

এটাও সত্যি যে শীতে ধান কাটার দুই-আড়াই মাস লোক পাওয়া যায় না। এর অন্যতম কারণ বর্ষা মৌসুমে টানা চার-পাঁচ মাস বসে থাকার পর শীতকালে ইটের ভাটাগুলো পুরোদমে উৎপাদন শুরু করে।

তার ওপর শুকনা মৌসুমে শুরু হয় গাছ কাটার কাজ। টানা কয়েক মাস গ্রামীণ অর্থনীতির অনেকগুলো মৌসুমি খাত একই সঙ্গে চলমান থাকে। ধান কাটা, গাছ কাটা, ইটভাটা—সব একই সময়ে শুরু হলে, লোকের টান তো পড়বেই। খুবই সত্যি যে দৈনিক ৯০০ টাকা দিয়েও তখন লোক পাওয়া যায় না, কিন্তু সে তো বছরে সর্বোচ্চ চার-পাঁচ মাসের জন্য।

‘ইজিবাইকওয়ালা গ্রামে গিয়ে খেতে কাজ করে না কেন’ এমন অভিযোগ করা শহুরে নাগরিক অনেক সময় জানেও না যে বছরে ছয় মাস বেকার থাকা গ্রামীণ কৃষিশ্রমিকদের একটা বড় অংশই কাজের খোঁজে জেলা শহরগুলোতে এসে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে বাধ্য হয়।

ওরা পোশাক কারখানায় কাজ করে না কেন?

গত বছর থেকে পোশাক কারখানায় গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকসংকট চলছে। প্রথমত, করোনার সময় গ্রামে চলে যাওয়া শ্রমিকের একটি বড় অংশই আর শহরে ফেরেনি। আবার শহরে ফিরলেও দক্ষ শ্রমিকদের একটা অংশ আর গার্মেন্টস খাতে ফেরেননি।

কিন্তু কেন? দীর্ঘদিন ধরেই বলা হচ্ছে যে পোশাকশিল্পে চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু এই খাতের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বাড়েনি, বরং শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে বেশি সংকটাপন্ন হয়েছে।

মহামারিতে বোঝা গেছে বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিক কতটা সঞ্চয়হীন, কতটা গরিব, কতটা ঋণগ্রস্ত। দক্ষ শ্রমিকেরাই অভিযোগ করছেন যে পোশাক কারখানার বেতন দিয়ে ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে আর টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত বাসাভাড়া, অতিরিক্ত পরিবহন খরচ, কিছুদিন পরপর গ্যাস–বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, আর খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য—সবকিছু মিলিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করে আর পোষায় না। দক্ষ শ্রমিকদের একটি বড় অংশই তাই কারখানার কাজের বদলে অন্য পেশায় ঢোকার চেষ্টায় করছে।

গাজীপুরে ইজিবাইকচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা দীর্ঘদিন পোশাক কারখানায়ই কাজ করেছেন। সোয়েটার কারখানাগুলোর ব্যাপক অটোমেশনের ফলে চাকরি হারিয়ে শেষে ধারদেনা করে ইজিবাইক কিনেছেন। এমনকি সারা দেশের ২৬টি পাটকল বন্ধ হওয়ার পর দেখা গেল খুলনা বা ডেমরার কাজ হারানো শ্রমিকেরা যখনই পাওনা টাকা বুঝে পেতে শুরু করলেন, অন্য কোথাও কাজের সুবিধা করতে না পেরে অনেকেই শেষ পর্যন্ত ইজিবাইক কেনা শুরু করলেন।

অর্থাৎ ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক, মৌসুমি কৃষিশ্রমিক, অথবা পোশাক কারখানার স্বল্প বেতনে চলতে না–পারা শ্রমিক, সবাই শেষ পর্যন্ত ইজিবাইক চালিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন। অথচ ইজিবাইকচালককে ক্রমাগত ‘ভিলেন’ বানানো গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই নিদারুণ আর্থসামাজিক বাস্তবতাকে একবারও কি বোঝার চেষ্টা করেছে?

এই যে ইজিবাইকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, এর দায় কি শুধু ইজিবাইক চালকের? এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ কি এমনি এমনি হয়েছে? শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, ৩০ টাকা রিকশাভাড়ার বদলে মাত্র ৫-১০ টাকা দিয়ে সে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারছে, উৎপাদিত পণ্য দ্রুত বাজারে নিতে পারছে, অসুস্থ মাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারছে, ইজিবাইকের দ্রুত বিকাশে গরিবের এই চাহিদার কোনো ভূমিকা নেই?

এই দেশে যে গরিবের গণপরিবহন বলে কিছু তৈরি হয়নি, সেই দায়ও গরিবকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া গরিব মানুষটিকেই বহন করতে হবে? সামাজিক বাস্তবতা বোঝে না মানলাম, কিন্তু ‘চাহিদা-জোগান’ও বোঝে না?

খবরের মতো দেখতে, আসলে কোম্পানির বিজ্ঞাপন

আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে যানজটের ওপর গণমাধ্যমের অনেক রাগ। কিন্তু খেয়াল করুন, যেসব গণমাধ্যম প্রচার চালাচ্ছে, ইজিবাইকে যানজট হয়, দুর্ঘটনা হয়, বিদ্যুৎ খায়—তাদেরই একটি অংশ আবার নতুন একটি কোম্পানির তৈরি করা ইজিবাইকের গুণগান গেয়ে দীর্ঘ খবর ছাপাচ্ছে। দেখতে খবরের মতো, কিন্তু আসলে বিজ্ঞাপন।

দেশীয় একটি কোম্পানি নতুন ইজিবাইক নিয়ে বাজারে আসছে, তা নিয়ে খবর ছাপানো হবে, খুবই স্বাভাবিক। দেশীয় শিল্পের উত্তরণ কে না চায়। কিন্তু এই ‘খবর’ তো শুধু কোম্পানির পণ্যের গুণগান গাইছে না, বরং গ্রামে–গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা স্থানীয় মেকানিকদের তৈরি ইজিবাইকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।

প্রচলিত দেশি-বিদেশি ইজিবাইকগুলো কত খারাপ, কত পরিবেশ দূষণ করে, কত বিদ্যুৎখেকো—এই হলো এসব খবরের মূল বিষয়বস্তু। কিন্তু সেই একই গণমাধ্যম তাদের বিখ্যাত প্রশ্নটি করতে বেমালুম ভুলে যাচ্ছে! পুরোনো ইজিবাইকে যানজট হয়, নতুন ইজিবাইকে যানজট হবে না? নতুন কোম্পানিটির লাখখানেক ইজিবাইক চলবে কোথায়? মঙ্গল গ্রহে?

খবরের মতো দেখতে বিজ্ঞাপনগুলো আরও যে তথ্যটি আড়াল করার চেষ্টা করেছে, তা হলো, স্থানীয় ইজিবাইকের দাম এক-দেড় লাখ টাকা। আর নতুন কোম্পানির ইজিবাইকের দাম ৬ লাখ টাকা (যে টাকায় জেদ্দা বা কুয়েতে নির্মাণশ্রমিকের চাকরি পাওয়া সম্ভব)।

এখন বলুন, দেড় লাখ টাকার পুরোনো ইজিবাইকগুলো রাস্তায় চললে ৬ লাখ টাকার নতুন ইজিবাইকগুলো কিনবে কে? কেউই না। তাহলে উপায়? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে স্থানীয় ইজিবাইকগুলো যেন রাস্তায় চলতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যে গত ডিসেম্বর মাসে নতুন কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ‘বিদ্যুৎ চুরি’র অভিযোগ দিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিটও হয়েছে। আদালত আদেশ দিয়েছেন, মহাসড়কে চলতে পারবে না ইজিবাইক।

এখন হিসাব মেলান, নতুন কোম্পানিটি গাজীপুরে হোতাপাড়ায় কারখানা বসিয়ে হাজার হাজার ইজিবাইকের উৎপাদন শুরু করেছে, শিগগিরই বাজারেও আসবে। তার ওপর আবার জিনিসটা অ্যাপভিত্তিক।

অর্থাৎ ৬ লাখ টাকা দিয়ে কিনবেন ঠিকই, কিন্তু কোম্পানি কেটে রাখবে চালকের রোজগারের একটি অংশ। তার মানে গাড়িটি যেন রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলতে পারে, ধনী কোম্পানিটিকে তা যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করতেই হবে। কিন্তু ৬ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে কেবল অলিগলিতে চালিয়ে পোষাবে? মহাসড়কেই যদি চলতে না পারে, তাহলে এত টাকা খরচ করে এই জিনিস কিনবে কে? ঠুক ঠুক করে গলিতে চালিয়ে টাকা উঠবে?

তার মানে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? পুরোনোগুলোকে ধরা হচ্ছে, রাস্তা সাফ করা হচ্ছে, যেন কোম্পানিগুলো নির্বিঘ্নে মহাসড়কে চলতে পারে। আর তাই প্রশাসনকে আগেই ‘ম্যানেজ’ করে ফেলা হয়েছে (ধরপাকড় ও নির্যাতনের হার বেড়ে যাওয়া এবং আদালতের রিট সেই বার্তাই দেয়)।

আবার এত টাকা বিনিয়োগ করে এবং কোম্পানিকে দৈনিক ‘জমা’ দিয়ে, চালকের পক্ষে গাড়িভাড়া না বাড়িয়ে উপায় থাকবে? তার মানে ধনীবান্ধব প্রযুক্তির মারপ্যাঁচ আর ধনীবান্ধব সরকারের নির্যাতনে গরিবের পছন্দের এই সাশ্রয়ী বাহনটি আর গরিবের বাহন থাকবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। কিন্তু এই ভীষণ জরুরি প্রশ্নগুলো না তুলে অনেক ‘গণমাধ্যম’ ব্যস্ত আছে বাজারে নতুন কোম্পানির সহজ ‘এন্ট্রি’ নিশ্চিত করতে!

ফরাসি বিপ্লবের সময় রানি ম্যারি এন্টোয়েনেট দরিদ্র প্রজাদের ঘরে রুটি নেই শুনে বলেছিলেন, ‘তাহলে ওরা কেক খায় না কেন?’ দেশের চল্লিশ লাখ ইজিবাইকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের প্রচারণাও ঠিক একই রকম: ‘ইজিবাইকওয়ালা ভাত পায় না, তাহলে কেক খায় না কেন?’

লেখক: উন্নয়ন গবেষক