বর্ণমেলায় সুপারিগাছের খোলে চড়াসহ গ্রামবাংলার খেলায় মেতেছে শিশু ও অভিভাবকেরা

সুপারিগাছের খোলে বসে খেলায় মেতেছে এক শিশু। সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, ধানমন্ডিছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মাঠে সুপারিগাছের একটি খোলের ওপর বসে আছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তরজা তনূদ্ভতম। তার বাবা মিল্লাত হোসেন খোলটি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে আয়োজিত বর্ণমেলায় এসে সুপারিগাছের খোল নিয়ে এভাবেই গ্রামবাংলার চিরচেনা খেলায় মেতে ওঠেন এ বাবা-সন্তান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের অংশ হিসেবে আজ একুশে ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত হয়েছে এ ‘বর্ণমেলা’। সকাল থেকেই শিশুসন্তানদের নিয়ে মেলায় ভিড় জমাতে থাকেন অভিভাবকেরা। গান, আবৃত্তির মতো নানা আয়োজনের পাশাপাশি বর্ণমেলায় গ্রামবাংলার অনেক খেলার আয়োজন রাখা হয়েছে। শহুরে পরিবেশে এসব খেলার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত অভিভাবক ও শিশুরা।

আরও পড়ুন
গ্রামবাংলার ‘রিং চালানো’ খেলার আয়োজন রয়েছে বর্ণমেলায়। সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি
ছবি: জাহিদুল করিম

বাড্ডা থেকে বর্ণমেলায় এসেছেন মিল্লাত হোসেন। প্রথম আলোকে এ অভিভাবক জানান, তিনি গ্রামে বড় হয়েছেন। ছোটবেলায় সুপারিগাছের খোল নিয়ে এভাবে অনেক খেলা করেছেন। তাঁর সন্তান শহরে বড় হচ্ছে। এসব খেলা সম্পর্কে সে জানে না। তাই সুপারিগাছের খোল দেখেই ছেলেকে তাতে বসিয়ে টেনে নিয়ে খেলা করলেন।

তরজার চোখেমুখেও আনন্দ দেখা গেল। বলল, এর আগে কখনো সুপারিগাছের খোলে চড়েনি সে। তার খুব ভালো লাগছে।

গ্রামবাংলার আরেকটি খেলা ‘রিং চালানো’র আয়োজনও রয়েছে বর্ণমেলায়। একটি লোহার রিংকে আরেকটি লোহার পাত দিয়ে চালানোর এ খেলাটি এখন তেমন একটা দেখা যায় না।

আরও পড়ুন
নারকেলগাছের পাতা দিয়ে পাটি বানাচ্ছে শিশুরা। সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি
ছবি: জাহিদুল করিম

বর্ণমেলায় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌরিশ মিস্ত্রী রিং চালানোর চেষ্টা করছিল; কিন্তু হচ্ছিল না। তার বাবা সমির মিস্ত্রী নিজেই মাঠে রিং চালালেন।

সমির মিস্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলায় তিনি এভাবে অনেক রিং খেলেছেন। বর্ণমেলায় অনেক দিন পর সেই রিং আবার দেখলেন। প্রথমে ছেলেকে চালাতে দিয়েছিলেন, সে পারল না দেখে পরে নিজেই কিছুক্ষণ চালালেন। এতে তাঁর বেশ ভালো লেগেছে।

বর্ণমেলার এ আয়োজনে নারকেলগাছের পাতাও এনে রাখা হয়েছে। সেই পাতা দিয়ে কেউ ঘড়ি বানাচ্ছে, কেউ পাটি।

মোহাম্মদপুর থেকে আসা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিহির মুন্তাসির পাটি বুনছিল সেই নারকেলপাতা দিয়ে। মিহির প্রথম আলোকে বলে, এর আগে সে কাগজ দিয়ে পাটি বানিয়েছে। বর্ণমেলায় এসে যখন নারকেলগাছের পাতা দেখল, তখন সে এ পাতা দিয়ে পাটি বানাল।

নারকেলের পাতা দিয়ে পাটি বানানোর পর তার ওপর কিছুক্ষণ বসে থাকল মিহির। বলল, এমন পাটিতে বসলে আরাম লাগে।

বায়োস্কোপ দেখছে শিশুরা। সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, ধানমন্ডি
ছবি: জাহিদুল করিম

নাগরদোলায় উঠতেও অনেক লম্বা লাইন দিতে হচ্ছে। আছে বায়োস্কোপসহ আরও আয়োজন।

প্রথম আলোর আয়োজনে এ বর্ণমেলায় সহযোগিতা করছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড মেরিল বেবি। সহযোগিতা করছে সেপনিল, সুপারমম ও প্রচার সহযোগী এটিএন বাংলা।

সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ মেলা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।