কত আসনে ইভিএম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে ইসি

নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছিল। এখন এসব ইভিএমের মধ্যে ৪০ হাজার যন্ত্র নষ্ট। বাকিগুলো মেরামতে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা খরচ হবে। এই অর্থ পাওয়া যাবে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিচ্ছে কমিশন

নির্বাচন কমিশন ভবন
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ, ইসির হাতে থাকা ইভিএমগুলোর মেরামত প্রয়োজন। এ জন্য লাগবে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় আগামীকাল মঙ্গলবার এই টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ জন্য নতুন ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল ইসি। তবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সে প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছিল। এখন এসব ইভিএমের মধ্যে ৪০ হাজার যন্ত্র নষ্ট। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএমেরও মেরামত প্রয়োজন। এসব যন্ত্র মেরামতে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা খরচ হবে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাজেট-সংক্রান্ত একটি বৈঠকে এ খরচের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল ইসি। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি। গত বুধবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান আজ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার মতো লাগবে। সেটা পাওয়া যাবে কি না, নিশ্চিত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে বলা হয়েছে। সে চিঠি প্রস্তুত হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার চিঠি যেতে পারে।

আরও পড়ুন

চলতি বছরে অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক আগামী অর্থবছরে দেওয়া যায় কি না, এ রকম একটি প্রস্তাব ইসি পাঠাচ্ছে জানিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, ‘যদি অর্থ বিভাগ টাকা সংস্থান করে, তাহলে আমরা ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হব। যদি টাকা না পাওয়া যায়, তাতেও আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে কী করব। ব্যালটে কতটা করব বা ইভিএমে আদৌ করব কি না। সবটাই নির্ভর করবে অর্থ প্রাপ্তির ওপর।’

কবে নাগাদ ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা তো আর একেবারে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসে থাকতে পারব না। আমরা যদি টাকার সংস্থান পাই, তাতেও বিএমটিএফ (ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি) বলেছে যে তাদের ছয় মাস সময় দিতে হবে মেরামত করার জন্য। কাজেই আমরা তো মনে করি এখনই হাই টাইম।’

যদি অর্থ বিভাগ টাকা সংস্থান করে, তাহলে আমরা ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হব। যদি টাকা না পাওয়া যায়, তাতেও আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে কী করব।
আনিছুর রহমান, নির্বাচন কমিশনার

আনিছুর রহমান বলেন, আগামী সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহে টাকা পাওয়ার সিদ্ধান্ত জানা গেলে ছয় মাস সময় পাওয়া যাবে। ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম ব্যবহারযোগ্য করা গেলে ৭০-৮০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। তাঁরা আশা করছেন, সরকার টাকার ব্যবস্থা করবে।

সরকার কোনো বরাদ্দ না দিলে কী করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।

আরপিও সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে

জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছিল ইসি। এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, ইসি যে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিল, তা আইন মন্ত্রণালয় এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। আইনমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে আছেন। তিনি সম্ভবত ২৮ মার্চ দেশে ফিরবেন। এরপর হয়তো সংশোধনী প্রস্তাবগুলো মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তোলা হবে।