ড. ইউনূসকে সশস্ত্র বাহিনী সর্বতোভাবে সহায়তা করবে
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে সশস্ত্র বাহিনী সর্বতোভাবে সহায়তা করবে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে সেনাসদরে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে ড. ইউনূসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, উনি অত্যন্ত আগ্রহী এই কাজ করার জন্য।’
বিদেশে অবস্থানরত মুহাম্মদ ইউনূস আজ বেলা দুইটার দিকে দেশে আসবেন জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি ওনাকে রিসিভ (অভ্যর্থনা জানাতে) করতে যাব। আমরা তাঁকে সর্বতোভাবে সহায়তা করব। সেনাপ্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান, সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী—সবার কাছ থেকে তিনি সহযোগিতা পাবেন। আমি নিশ্চিত যে অত্যন্ত সফলভাবে ওনার এ কাজ সমাধান করতে সক্ষম হবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আগামীকাল শপথ গ্রহণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। একটা প্রস্তাব ছিল বিকেলে করার। বিকেলে খুব টাইট হয়ে যেতে পারে, যেহেতু উনি ২টা ১০ মিনিটের দিকে আসবেন। আমরা রাত ৮টার দিকে করতে পারি। হয়তো ৪০০ জন লোকের উপস্থিতি সেখানে থাকবে।’
সেনাপ্রধান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ১৫ জনের মতো থাকতে পারেন। তবে এর সঙ্গে দু-একজন যোগ-বিয়োগ হতে পারে।
দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাপ্রধান ছাড়া আর কেউ নেওয়ার ছিল না এবং তাই সেই দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তিনি সব রাজনৈতিক দলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন এবং তারা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলেও জানান সেনাপ্রধান।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘তারপরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি অনেক শান্ত হয়ে আসছে। পুলিশ কোনো দায়িত্ব পালন করছে না। পুলিশের একটা বড় শক্তি, এটার যে ভয়েড (শূন্যতা) সৃষ্টি হয়েছে, তা সেনাবাহিনী দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। হাজার হাজার লোককে আমরা এসব সমস্যা থেকে উদ্ধার করেছি। বহু পুলিশ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।’
পুলিশের শূন্যতা পূরণ সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি এটুকু আপনাদের বলছি যে যারা এসব (সহিংসতা-লুটপাট-আগুন দেওয়া) কাজে জড়িয়েছে, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পুলিশের পুনর্গঠনের কাজ চলছে বলে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘পুলিশপ্রধান হিসেবে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে পুলিশের মনোবল আবার ফেরত আসবে। পুলিশ পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে।’
শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর সব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে, সেই দায়দায়িত্বও আমার। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। খুব কম সময়ের মধ্যে একটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরত এসেছে। আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে। আমাকে একটু সময় দেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে চলে আসব।’
অনেক ধরনের গুজব চলছে এবং তাতে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনী নিয়ে সেনানিবাসের মধ্যে বিভিন্ন কিছু হচ্ছে—এসব গুজব রটানো হচ্ছে। নিশ্চিত না হয়ে কাউকে কোনো সংবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
গণমাধ্যম ইতিমধ্যে অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণভাবে সংবাদ পরিবেশন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শিক্ষার্থীরা এখনো ভালো কাজ চালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের অভিনন্দন জানান সেনাপ্রধান।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী সর্বদা জনগণের সঙ্গে আছে এবং থাকবে জানিয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে মিলে কাজ করে যাব।’