জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ করবে সেনাবাহিনী, লিখিত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত শাটডাউন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ সেনাবাহিনী করতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি জানান, তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। তবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের বিষয়টি লিখিত না আসা পর্যন্ত তাঁদের শাটডাউন কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন।
আজ বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকের পর দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করে এসব সিদ্ধান্ত জানান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের কক্ষে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুজন প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী ও প্রকল্প পরিচালক আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আজকের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হবে। সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। আগামী রোববার তারা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবে। কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে, যা তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।’
পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের ইস্পাতের তৈরি (স্টিলবেজড) ভবনের নির্মাণকাজও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘সেটির কাজও সেনাবাহিনী দিয়ে করাতে আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম। তারা কাজটি করতে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে।’
শাটডাউন কর্মসূচি চলবে
উপাচার্যের বক্তব্যের পর বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান এ কে এম রাকিব, ফয়সাল মুরাদ, ফেরদৌস শেখ ও আতিকুর রহমান তানজিল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে পাওয়ার আগপর্যন্ত ক্যাম্পাসে শাটডাউন কর্মসূচি চলমান থাকবে। তবে সব ধরনের জরুরি সেবা (রেজিস্ট্রার অফিস, মেডিকেল সেন্টার, ক্যানটিন এবং ডিন ও বিভাগীয় অফিসগুলো) শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। শাটডাউন অবস্থায় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিক্ষোভ-শোডাউন, স্লোগান-মিছিল এবং জ্বালাও–পোড়াও করা যাবে না।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, লিখিত সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের দাবির অনুকূলে না এলে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।
লিখিত নিশ্চয়তার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থী মাকছুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এর আগেও সেনাবাহিনীকে কাজ দেবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল। দুই মাস যাওয়ার পরও আমরা সেটার অগ্রগতি দেখিনি। তাই লিখিত না আসা পর্যন্ত আমরা কোনো কথা বিশ্বাস করছি না। লিখিত পেলেই আমরা আশ্বস্ত হব।’
আরেক শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু আমরা এখনো লিখিত কোনো রেজল্যুশন (সিদ্ধান্ত) পাইনি, সেহেতু আমাদের চলমান শাটডাউন কর্মসূচি বহাল থাকবে।’
শিক্ষার্থীদের দাবি ও অনশন
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ হস্তান্তরের চুক্তি অবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে; পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের ইস্পাতের তৈরি (স্টিলবেজড) নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু ও শেষ করতে হবে এবং যত দিন পর্যন্ত আবাসনব্যবস্থা না হয়, তত দিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসনভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
এই তিন দফা দাবিতে গত রোববার সকালে অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সোমবার সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবির মধ্যে প্রথম দুটি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ৩৫ ঘণ্টা পর অনশন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তাঁরা শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।