২০২৪ সালে দেশে ৩১০ জন আত্মহত্যা করেছেন। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে কিশোর-কিশোরীরা, যা মোট আত্মহত্যার ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
২০২৪ সালে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের করা এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ শনিবার অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম: ‘২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি’। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজনীতার কথা বলা হয় সংবাদ সম্মেলনের। এ ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত সহায়তার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, দেশের ১০৫টি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে তারা জরিপটি করেছে। জরিপে দেখা যায়, গত বছর দেশে ৩১০ জন আত্মহত্যা করেছেন। ২০২২ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৫৩২, ২০২৩ সালে ৫১৩। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যার খবর হয়তো গণমাধ্যমে কম এসেছে বলে তারা ধারণা করছে।
জরিপের তথ্য অনুসারে, গত বছর ১৩-১৯ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে, যা মোট আত্মহত্যার ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহত্যা করেছে ২৬-৩০ বছর বয়সীরা। আত্মহত্যাকারীদের ৬১ শতাংশ নারী। অর্থাৎ নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। নারী শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার ঝুঁকিতে বেশি। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত সহায়তা বেশি প্রয়োজন।
জরিপ অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। এই হার ৪৬ শতাংশের বেশি। এরপরে আছে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে জানিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশন বলেছে, ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী ২০২৪ সালে আত্মহত্যা করেছে। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ও তুলনামূলক দুর্বল মানসিক স্থিতিশীলতার কারণে তারা সহজে হতাশায় ভোগে। এ ছাড়া ২০২৪ সালে কলেজশিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, গত বছর ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি, ২৯ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে। এরপরে আছে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ধারণা কম। বিষয়টি নিয়ে তারা সচেতনও না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ পর্যায়ে কিছু শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক সায়্যেদুল ইসলাম বলেন, সফলতা উদ্যাপন করা হলেও ব্যর্থতাকে সামাল দেওয়ার বিষয়টি সমাজে শেখানো হয় না। তিনি অভিভাবকদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ ও আইনজীবী নওফেল জামির।