জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী ‘জুলাই-জাগরণ’-এর প্রতিটি ছবি, নিদর্শন, শহীদদের ব্যবহারের প্রতিটি জিনিসের আলাদা করে ছবি তুলছিলেন আবু জাফর। সব মনোযোগ যেন সেদিকেই।
কথা বলে জানা গেল, স্ত্রীর প্রচণ্ড আগ্রহে ফার্মগেটের মণিপুরিপাড়া থেকে এসেছেন তাঁরা। বেসরকারি এই চাকরিজীবী নিজের মুঠোফোনে তোলা প্রদর্শনীর ছবি দিয়ে ব্যক্তিগত একটি অ্যালবাম বানাতে চান। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের মুহূর্তগুলোয় এভাবেই ধরে রাখতে চান তিনি।
প্রদর্শনী কেমন লাগল জানতে চাইলে আবু জাফর বলেন, ‘স্ত্রীর জন্যই আসা, তবে আমারও ভালো লেগেছে। দেখছি আর ছবি তুলছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাসা ফার্মগেটে হওয়ায় অনেক ঘটনা নিজের চোখে দেখেছি। তবে সবার তো সে সুযোগ হয়নি। তারা এখানে এসে দেখবে। যারা ভুলে গিয়েছে, আবার স্মরণ করবে। আশা করি, সময়কে স্মরণ করাতে ভবিষ্যতেও প্রথম আলো এ রকম আয়োজন করবে।’
২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নানা ঘটনা তুলে ধরতে প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজন ‘জুলাই-জাগরণ’ প্রদর্শনী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার দোতলায় প্রদর্শনী চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। সঙ্গে থাকবে আরও নানা আয়োজন।
বেশ সময় নিয়ে ছবি ও তথ্য পড়ছিলেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মারুফ আহমেদ। আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রদর্শনীর মাধ্যমে হলেও সময়কে সংরক্ষণ করা জরুরি। যারা তখন বের হতে পারেনি বা সরাসরি দেখেনি, তাদের উদ্দেশ্যে এ রকম আয়োজন করা উচিত। অতীতকে পুরোটা তুলে ধরা না গেলেও এখানে এসে বোঝা যায়, কী ঘটেছে জুলাই-আগস্টে।’ পরেরবার বন্ধুদের নিয়ে প্রদর্শনীতে আসার কথা জানালেন তিনি।
প্রদর্শনী ঘুরে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন আল ইমরান। ভারী কণ্ঠে গাজীপুর থেকে আসা এই তরুণ বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদদের দেখে চোখে পানি চলে এসেছে। অনেকে আন্দোলনের আত্মত্যাগকে এখনো বিশ্বাস করতে চায় না৷ তাদের এখানে আসা উচিত। আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জনকারীদের সঠিকভাবে চেনা প্রয়োজন।’
প্রদর্শনীর ‘সত্যে তথ্যে জুলাই’ অংশে আছে পত্রিকা, প্রতিবেদনের নিদর্শন। ছবি আছে ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ এবং ‘জুলাই-জাগরণ’ অংশে। ‘রক্তাক্ত স্মারক’ অংশে সাজানো আন্দোলন দমন করতে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী বুলেট ও রাবার বুলেটের খোসা, ছররা গুলি, গ্রেনেডের পিন, কাঁদানে গ্যাসের খোসা—এসব।
ফাহিমা খাতুন নামের এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। তাই ছবিগুলো দেখে জুলাইয়ের স্মৃতি রোমন্থন হচ্ছিল। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা এত বড় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছি। কত মানুষ কত কিছু হারিয়েছে। তাই বড় আয়োজন করে আরও কিছু শহীদের ছবি রাখতে পারলে ভালো হতো।’
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সোহানা সোহা বন্ধুবান্ধব নিয়ে প্রদর্শনী দেখতে এসেছেন। প্রদর্শনী নিয়ে জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আন্দোলন নিয়ে নতুন কিছু বিষয় জেনেছি। তবে মুগ্ধ, আবু সাইদদের নিয়ে কর্নার সবচেয়ে ভালো লেগেছে।’