রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, আর কোনো প্রার্থী নেই
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনই হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় এখন আর ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, তিনি আমাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। এ মুহূর্তে আমার প্রতিক্রিয়া এটুকুই।’
সব অনুমান, নানা জল্পনাকল্পনা ভুল প্রমাণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনীত করল আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে সবার নজর ছিল। কে হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি—এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু সব আলোচনা ছাপিয়ে অনেকটা চমকের মতো এসেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নাম।
আর কোনো প্রার্থী না থাকায় এখন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণার অপেক্ষা। বিধান অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার প্রার্থিতা বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বিবেচিত হলে নির্বাচন কমিশন তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। এখন শুধু প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পালা।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম প্রথম আলোকে জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময় আজ রোববার বিকেল চারটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া আর কারও মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। আগামীকাল সোমবার দুপুরের মধ্যে প্রার্থিতা বাছাইয়ের পর নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
এর আগে আজ রোববার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার আগে সকালে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে প্রার্থী মনোনীত করার সিদ্ধান্ত দেন বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল গত মঙ্গলবার বৈঠক করে দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী বাছাই করার দায়িত্ব দিয়েছিল। আজ সকালে দলীয় সভাপতির কাছে সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র পেশ করেন।
দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র পেশ করার পর নির্বাচন কমিশনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন প্রদান করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।’
সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেয়নি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির সাতজন সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন গত ১১ ডিসেম্বর। ফলে এখন সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কিত বিধানে বলা হয়েছে, প্রার্থী একজন হলে এবং যাচাইয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে নির্বাচন কমিশন তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। সংসদে আর ভোটের প্রয়োজন হবে না। আগামীকাল প্রার্থিতা বাছাইয়ের দিনেই একমাত্র প্রার্থী দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহাবুদ্দিন কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।