ইন্টারনেটে নানা তথ্য, ভিডিও খুঁজছেন গ্রামীণ নারীরা
ইন্টারনেট শেখার বিশেষ এই উদ্যোগ গ্রামীণফোনের। সহযোগিতায় প্রথম আলো, নকিয়া ও ঢাকা ব্যাংক।
‘মাঝে মাঝে মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করব বুঝতে পারি না। মোবাইল ফোনে যে অনেক কিছু খুঁজে বের করা যায়, জেনে খুব আনন্দ পেলাম।’ বলছিলেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ৪ নম্বর মৌগাছি ইউনিয়নের গৃহিণী আমেনা খাতুন। গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ইন্টারনেট শেখার আয়োজন উঠান বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন আমেনা খাতুনের মতো আরও অনেক নারী।
তাঁদের কাছে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জানতে চেয়েছিলেন, ইন্টারনেটের দুনিয়া কি সবার? সম্মিলিত উত্তর এসেছে, ‘হ্যাঁ’।
ইন্টারনেট যে মানুষের নানা রকম চাহিদাও প্রয়োজন পূরণ করতে পারে, বিষয়টি সরাসরি শেখাতেই ‘ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার’ শীর্ষক এ উদ্যোগ। এর সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো, নকিয়া ও ঢাকা ব্যাংক পিএলসি। ইন্টারনেটবিষয়ক জ্ঞান বাড়াতে সারা দেশের দুই হাজার ইউনিয়নে আয়োজিত হচ্ছে এ বৈঠক। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৬৮টি ইউনিয়নে উঠান বৈঠক হয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর ৪ নম্বর মৌগাছি ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল হান্নানের বাড়িতে হয় উঠান বৈঠক। স্মার্টফোন থেকে ‘সার্চ অপশন’ ব্যবহার করে ইন্টারনেটে অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়। বৈঠকে দেখানো হয় তথ্যভিত্তিক একটি ভিডিও। যা দেখে আত্মবিশ্বাসী হন গ্রামীণ নারীরা।
সঞ্চালক জানতে চান, কী বেশি দেখা হয় ইন্টারনেটে? বেশির ভাগ নারীর উত্তর ছিল, ইউটিউব। যাঁদের অনেকেই নিজে নিজে মুঠোফোন সার্চ করতে পারেন না, স্বামী বা সন্তানকে বলতে হয়, ‘এটা খুঁজে বের করে দাও।’ কিন্তু উঠান বৈঠকে এসে তাঁদের অনেকেই শিখেছেন কীভাবে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য, ভিডিও সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। উঠান বৈঠকের প্রশিক্ষক তাঁদের শিখিয়েছেন, ইউটিউবের সার্চ অপশনে গিয়ে ‘ভয়েস কমান্ড’ দিলে অর্থাৎ মুখের কথায় কাঙ্ক্ষিত কনটেন্ট চোখের সামনে চলে আসে।
নার্সিং কলেজ থেকে সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের নাছরিন আক্তার। উঠান বৈঠকে কেন এলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘সব সময় তো ফেসবুক–টিকটক দেখেই সময় কাটাতাম। এখানে আপা (প্রশিক্ষক) যা যা সার্চ করে দেখালেন, এখন মনে হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেক কিছুই শিখতে পারব। নিজে শেখার পাশাপাশি মুরব্বিরা কোনো কিছু খুঁজে না পেলে তাঁদেরও সহযোগিতা করব।’
কথার সত্যতা পাওয়া গেল উঠান বৈঠকে উপস্থিত গ্রামীণ নারীদের মধ্যে। তাঁদের ‘দোয়েল’ ও ‘শাপলা’ নামে দুটি দলে ভাগ করলেও সবাইকে দেখা গেল পরস্পরকে সহযোগিতা করতে।
এরপর ‘সার্চ অপশন’ নিয়ে হয় আকর্ষণীয় একটি পর্ব। সবশেষে প্রদর্শিত হয় কৃষিবিষয়ক একটি ভিডিও। সেখান থেকে চারটি প্রশ্ন করা হয়। সঠিক উত্তর প্রদানের ভিত্তিতে বাছাই করা হয় চারজনকে। তাঁদের সবার হাতে দেওয়া হয় ইন্টারনেটযুক্ত ট্যাব।
এবার আর মুখে উত্তর নয়, সঞ্চালকের দেওয়া কৃষিবিষয়ক সমস্যা শুনে সার্চ করে প্রাপ্ত তথ্য থেকেই সমাধান দিতে হবে। করা হয় চারটি প্রশ্ন, কেউ প্রথম প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলে প্রতিযোগিতা সেখানেই শেষ এবং তিনি পান ঢাকা ব্যাংকের সৌজন্যে আকর্ষণীয় পুরস্কার। এ ছাড়া উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণকারী গ্রামীণ নারীরা পাচ্ছেন আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ে নকিয়ার মুঠোফোন হ্যান্ডসেট কেনার সুযোগ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু সার্চ অপশনই নয়, ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার শেখার মাধ্যমে গ্রামীণ নারীরা যাতে জীবনে চলার পথের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান নিজেরাই করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই আয়োজন করা হচ্ছে উঠান বৈঠক।