কর্মীদের কর্মবিরতি, মেট্রোরেল চলছে, সকালে কোথাও কোথাও ভাড়া আদায় ব্যবস্থা অকার্যকর
এমআরটি পুলিশ সদস্য দ্বারা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মী মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা। এ কারণে আজ সোমবার সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচলে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যাত্রীদের ভাড়া আদায় করার ব্যবস্থা কোথাও কোথাও অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
মেট্রোরেলে ফার্মগেট স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কারওয়ান বাজারে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী তাপসী রায়। তিনি বলেন, ফার্মগেটে ঢোকার সময় কার্ড পাঞ্চ করার পর তিনি স্টেশনে যেতে পেরেছেন। ট্রেন চলেছে। তবে কারওয়ান বাজারে নেমে পাঞ্চ মেশিন অচল দেখেন। পাঞ্চ না করেই চলে আসতে পেরেছেন।
তাপসী রায় আরও বলেন, এ সময় স্টেশনে দায়িত্বে থাকা কয়েকজন তাঁকে চলে যেতে বলেন। পরে জরিমানা করা হবে কি না, জানতে চাইলে তাঁরা বলেন আজকে কিছু করা হবে না। টিকিটের কাউন্টারগুলোও বন্ধ দেখেছেন তিনি। ফলে যাঁদের এমআরটি ও র্যাপিড পাস আছে, শুধু তাঁরাই যাতায়াত করতে পারছেন। কেউ টিকিট কাটতে পারছেন না।
ডিএমটিসিএলের জনসংযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মীদের ধর্মঘটের কারণে মেট্রোরেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। চলাচল স্বাভাবিক আছে । তবে কোথাও কোথাও রাজস্ব আয়ে সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ স্টেশনে স্টেশনে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছে। সুরাহা হয়ে যাবে।’
সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই ফ্রিতে মেট্রোরেলে চলাচল করা যাচ্ছে বলে পোস্ট দেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী অপু আহমেদ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বলেন, ‘মতিঝিল স্টেশনে দেখলাম কার্ড পাঞ্চ নিচ্ছে না, মানে টিকিট লাগছে না। দায়িত্বরত কর্মীরা বলছেন, সমস্যা নেই, যান। লোকজন যাচ্ছে। আবার কাঙ্ক্ষিত স্টেশনে নেমেও যাচ্ছে।’ মতিঝিল স্টেশন থেকে কারওয়ান বাজার স্টেশনে আসার পথে তিনি এমন দৃশ্য দেখেন।
তবে সকাল ১০টার দিকে উত্তরা স্টেশন থেকে বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রফিউদ্দিন কারওয়ান বাজার স্টেশনে এসেছেন। তিনি বলেন, তিনি স্বাভাবিকভাবেই দুই স্টেশনে কার্ড পাঞ্চ করতে পেরেছেন। তাঁর ভাড়াও কেটেছে।
রাতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ‘সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ’ ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা তুলে ধরে ছয়টি দাবি জানানো হয়।
মেট্রোরেল কর্মীদের দাবিগুলো হচ্ছে, আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ওই পুলিশ সদস্যকে (এসআই মাসুদ) স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে ও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে (কনস্টেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি দিতে হবে এবং তাঁদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে হবে, এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্য সব কর্মীকে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অফিশিয়াল পরিচয়পত্র ও অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলা হয়, ‘দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মেট্রোরেলের সব কর্মী কর্মবিরতি পালন করব এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং মেট্রোস্টেশনে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, ‘আনুমানিক বিকেল সোয়া ৫টায় দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইংগেট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তাঁরা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের সেখান থেকে পিজি গেট ব্যতীত সুইংগেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।'
পরবর্তী সময় ঠিক একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইংগেট ব্যবহার করে সুইংগেট না লাগিয়ে চলে যান, উক্ত বিষয়ের কারণ তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা পূর্বের ঘটনার জেরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোলরুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ–এর সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ–এর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও–এর শার্টের কলার ধরে জোর করে এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীরা বিষয়টি অনুধাবন করে ওই এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে পুলিশের কাছ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।