আইনজ্ঞদের মত: এভাবে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা যথাযথ নয়
চাপ তৈরি করে বিচারপতিদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার প্রক্রিয়া যথাযথ নয় বলে মনে করেন আইনবিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, পদত্যাগের দাবির মুখে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মূলে কুঠারাঘাতের শামিল।
আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। আর ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি–লিগ্যাল উইং।
যে প্রক্রিয়ায় বিচারকদের পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করা হচ্ছে, তা শৃঙ্খলাবহির্ভূত বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের জে্যষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটা নৈরাজ্যকর অবস্থা। কোনো বিচারপতি বা কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি লিখিতভাবে জানাতে প্রধান বিচারপতি একটি হটলাইন সেবা চালু করেছেন। এর ব্যবহার না করে পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে চাপ প্রয়োগের প্রবণতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোনো বিচারপতিই হয়তো এ থেকে রেহাই পাবেন না।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও অযোগ্যতা এমনকি দুর্নীতির অভিযোগ থাকতেও পারে। তার অর্থ যদি এই নয় যে এসব অভিযোগের কারণে বিচারপতিরা জিম্মি হয়ে যাবেন, বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে অপসারিত হবেন। তাহলে বিচারকদের রাগ, অনুরাগ ও বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচার করা দুরূহ হয়ে পড়বে। কারণ, কোন রায়ে কে বিক্ষুব্ধ হচ্ছে, সেটা মাথায় রেখে যদি তাঁদের রায় দিতে হয়, তাহলে জনগণের জন্য বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আর কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে না।’
শাহদীন মালিক মনে করেন, ‘পদত্যাগের দাবির মুখে বিচারকাজ থেকে অপসারিত হওয়াটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মূলে কুঠারাঘাতের শামিল। বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত এবং সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের একটি প্রক্রিয়া সংবিধানে বলে দেওয়া আছে। কয়েকজন বিচারককে বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়নি, সার্বিকভাবে এ ঘটনাগুলো খুবই বেদনাদায়ক।’
চাপ প্রয়োগের প্রক্রিয়া অশোভন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এগুলো পরিহার করা উচিত। দুদিন পরপর শিক্ষার্থীরা এসে দাবি জানাতে থাকবে এবং এটার পরিপ্রেক্ষিতে একটা অ্যাকশন হবে, এর কোনোটাই ঠিক নয়। এতে বিচার বিভাগের শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর আগেও যেভাবে হয়েছিল, ছয়জন আপিল বিভাগের বিচারপতির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটাও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হয়নি।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘নিয়মের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই নিয়মটাই সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছিল। আমরা এখন নিয়ম না মেনে গায়ের জোর খাটানোর চেষ্টা করছি, যেটি পরিহার করা উচিত।’