লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের সঙ্গে জড়ানো একটি নাম। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ছিলেন ভারতের সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব জেনারেল স্টাফ। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পিভিএসএম (পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেল) খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা: বার্থ অব আ নেশন। ২০০৮ সালের ২৮-২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে তাঁর আর কে পুরামের ফ্ল্যাটে প্রথম আলোর মিজানুর রহমান খান এ সাক্ষাৎকার নেন।
প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের মুখ্য ব্যক্তিত্বের মধ্যে হাতে গোনা যে কজন বেঁচে আছেন, আপনি তাঁদের একজন।
জে এফ আর জ্যাকব: আমি জানি না, আমি মুখ্য ব্যক্তিদের একজন কি না। আমি আমার কাজ করেছি। কাজটা পছন্দের ছিল। সৈনিকের কর্তব্য পালন করেছি মাত্র।
প্রথম আলো: আর এটাই আপনার সামরিক জীবনের শ্রেষ্ঠতম সাফল্য।
জ্যাকব: হ্যাঁ। আমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। কিন্তু এটাই আমার জীবনে অনন্য সুযোগ, যা ইতিহাসের ওপর প্রভাব রাখতে পারে। সৈনিক হিসেবে আমি আমার সর্বোত্তম সামর্থ্য ও বিবেক দিয়ে পরিচালিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি রাজনীতিক নই, রাজনীতির সব সমস্যা বুঝতেও পারি না। আমাকে কাজ দেওয়া হয়েছিল। আমি সবচেয়ে ভালো উপায়ে তা করতে চেষ্টা করেছি। ব্যস, এটুকুই।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের বিজয়কে যদি আমরা কেবলই সামরিক নিরিখে দেখি, তাহলে বিশ্বের ইতিহাসে এর কি কোনো নজির আছে?
জ্যাকব: বাংলাদেশে কিন্তু মূলত ছিল জনগণের সংগ্রাম। আমরা কেবল তাতে সহায়তা দিয়েছি।
প্রথম আলো: এমন কিছু বলুন, যা আপনি আপনার বইয়ে লেখেননি।
জ্যাকব: পাকিস্তানি একজন ব্রিগেডিয়ারকে নিয়ে পাকিস্তানি স্টাফ কারে চেপে আপনাদের পুরোনো এয়ারপোর্ট থেকে নিয়াজির হেডকোয়ার্টারে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমাদের গাড়ি লক্ষ্য করে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছোড়েন।
প্রথম আলো: আপনি এ ঘটনা আপনার বইয়ে একেবারেই উল্লেখ করেননি?
জ্যাকব: ঈষৎ ইঙ্গিত রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বরের সকাল সোয়া নয়টায় জেনারেল স্যাম মানেকশ আমাকে টেলিফোন করেন। বলেন, দ্রুত ঢাকায় গিয়ে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের গোছগাছ করতে। যশোরে হেলিকপ্টার বদলে ঢাকার আকাশে পৌঁছাতে দেখি একটি হেলিকপ্টার চক্কর কাটছে। টারমাকে ১৮টি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান (পরে জেনেছি ওগুলো ছিল ভূপাতিত)। আমরা দেখলাম বিমানবিধ্বংসী কামানের নল আমাদের হেলিকপ্টারের দিকেই তাক করা। আমাদের এয়ার কমোডর ফিরে যেতেই চাইলেন। কিন্তু আমি পাইলটকে অবতরণের নির্দেশ দিই। পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার বকর সিদ্দিকীর সাক্ষাৎ মিলল। জাতিসংঘ প্রতিনিধি ও ফরেন প্রেস কোরও ছিল। তো আমরা নিয়াজির সদর দপ্তরের উদ্দেশে রওনা দিলাম। পথিমধ্যে মুক্তিবাহিনী আমাদের আটকায়। তারা মেজাজে যুধ্যমান, ভাঙচুর শুরুর জন্যও প্রস্তুত ছিল। আমি তাদের বোঝালাম, বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি রক্তপাতহীন ক্ষমতা হস্তান্তরই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
প্রথম আলো: আপনি কেন নিয়াজিকে তার তরবারি সমর্পণ করতে বলেছিলেন?
জ্যাকব: ইতিহাস প্রাচীন প্রথা হলো পরাজিত জেনারেল তাঁর তরবারি বিজয়ী জেনারেলের কাছে সমর্পণ করেন। নিয়াজি বললেন, আমার তরবারি নেই। বললাম, তাহলে পিস্তল দিন, তাতেই চলবে। আমি যখন তার পিস্তলটি পরীক্ষা করলাম, দেখলাম অকেজো, কতকাল পরিষ্কারই করা হয়নি। এটা নিশ্চয় কোনো জেনারেলের পিস্তল হতে পারে না। যাক, সমর্পণ তো প্রতীকী ছিল।
প্রথম আলো: পিস্তলটি এখন কোথায়?
জ্যাকব: দেরাদুনের মিলিটারি একাডেমিতে।
প্রথম আলো: তাত্ত্বিকভাবে ভারতীয় সেনাদের সহায়তা ছাড়া মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব ছিল?
জ্যাকব: খুবই হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন। আমি যেটা বলতে পারি, তা হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল একটি যৌথ প্রচেষ্টা। ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। উভয়ে উভয়ের প্রতি নির্ভরশীল ছিল। উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় ঢাকার আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য উভয়ে কৃতিত্বের দাবিদার।
প্রথম আলো: আপনি জেনারেল মানেকশর পরিকল্পনা পরিহার করে ঢাকার পতন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেন এবং তাতে সফলও হন। এ কথা যখন আপনি বইয়ে প্রকাশ করেন, তখন মানেকশর কী প্রতিক্রিয়া ছিল? এ নিয়ে কি কোনো কথা হয়েছে আপনাদের মধ্যে?
জ্যাকব: আমার বইটি ১৯৯৭ সালে প্রথম বের হয়। তখন মানেকশ বেঁচেছিলেন। তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। কারণ, আমি যা বলেছি তা তো রেকর্ডের ভিত্তিতে। সবকিছুই সেনা সদর দপ্তরে রক্ষিত আছে।
প্রথম আলো: কেন ও কীভাবে আপনি এমন অভাবনীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন?
জ্যাকব: অপারেশনের মূল আদেশে টার্গেট ছিল খুলনা ও চট্টগ্রাম এবং তার ভূখণ্ড। পরোক্ষ ইঙ্গিত ছিল সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা। আমি বুঝলাম, কোনো আধাখেঁচড়া বিজয় দিয়ে প্রবাসী সরকার করা যাবে না। দরকার পূর্ণ বিজয়। আর সে ধরনের বিজয় ঢাকাকে মুক্ত না করে পারা যাবে না। ঢাকা কেবল বাংলাদেশের জিওপলিটিক্যাল নয়, জিওস্ট্র্যাটেজিক্যাল ও জিওকালচারাল কেন্দ্রবিন্দুও বটে। সুতরাং ঢাকাকে বাদ দিয়ে কোনো যুদ্ধজয় সফল হতে পারে না। এই ভাবনা থেকেই আমি সেনা সদর দপ্তরের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করি। তা ছাড়া পুরো যুদ্ধে আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ছিল জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ। নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন। কারণ, যুদ্ধবিরতি ঘটিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করাই ছিল শত্রুশিবিরের কৌশল। নিরাপত্তা পরিষদে কখন কী ঘটে, সে চিন্তায় আমি বহু নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। বিশেষ করে ভেটো পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা আমাকে অস্থির রাখত। আমাদের আসন্ন যুদ্ধজয় সম্পর্কে তখন পর্যন্ত আমরা বিশ্বকে তেমন কিছুই দেখাতে পারছিলাম না। বড় কোনো শহরই আমরা দখল করতে পারিনি।
প্রথম আলো: ঢাকাকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য কোনো সমর ইতিহাস থেকে কোনো পাঠ নিয়েছিলেন কি?
জ্যাকব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বার্মা, বার্মা থেকে সুমাত্রা। সুমাত্রার আরাকানসহ আরও কয়েকটি স্থানে আমরা অবতরণ করেছিলাম। কিন্তু সবাই ছিল সাবসিডিয়ার। মূল লক্ষ্য ছিল রেঙ্গুন। বার্মাকে স্বাধীন করা। রেঙ্গুনকে দখল করা ছাড়া বার্মাকে মুক্ত করার রণকৌশল সফল হওয়া সম্ভব ছিল না। জাপানি বাহিনী রেঙ্গুন থেকেই পুরো বার্মা নিয়ন্ত্রণ করছিল। তো আমি ওই পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলাম। ওই অবস্থা শতভাগ অভিন্ন নয়, তবে মূল বিবেচ্য বিষয় ছিল অভিন্ন। আমি বুঝলাম খুলনার মতো কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পুরো দখল করে নিতে পারলেও তা খুব কাজে দিত না।
প্রথম আলো: তবে জেনারেল মানেকশ তথা ভারতের সেনা সদর দপ্তরের পরিকল্পনায়ও নিশ্চয় একটা কৌশলগত যুক্তি ছিল।
জ্যাকব: ঠিক আছে, আমাকে বলতে দিন। আমি পাকিস্তানি বাহিনীর রণকৌশল খতিয়ে দেখলাম। তারা ভূখণ্ড রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত ছিল, এক ইঞ্চি ছাড়বে না, যা ছিল মূর্খতা। শহরগুলোকে রক্ষায় তারা ছিল ভীষণ ব্যাকুল। নিয়াজি যদি নদী পারাপারের স্থানগুলোতে পাহারা বসাতেন, তাহলে আমাদের খুব দুর্ভোগ পোহাতে হতো।
প্রথম আলো: ১৬ ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণের শেষ মুহূর্তগুলো একটু স্মরণ করুন।
জ্যাকব: যখন আমি নিয়াজির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলাম তিনি বললেন, কে বলেছে যে আমি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছি। আমি এসেছি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে। তাঁর অধীনে ২৬ হাজার ৪০০ সেনা তখন ঢাকায়। ঢাকার দক্ষিণে আমাদের সেনাসংখ্যা মাত্র তিন হাজার। হামিদুর রহমান কমিশন নিয়াজিকে এ প্রশ্ন করেছিল যে ২৬ হাজার সেনা যখন ঢাকায়, তখন তারা আরও কয়েক সপ্তাহ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারত। তখন জাতিসংঘের অধিবেশনও চলছে। ভারতীয় সেনাদের ফিরে যেতে বাধ্য করার একটা সম্ভাবনা ছিল। তাহলে তারা কেন জনসমক্ষে মানমর্যাদা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে লজ্জাজনকভাবে আত্মসমর্পণ করল? এমনকি তাদের গার্ড অব অনার পর্যন্ত দিতে হলো? নিয়াজি উত্তর দিয়েছেন, ‘জেনারেল জ্যাকব আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছিলেন।’ তিনি তাঁর বইয়েও তা লিখেছেন। আরও বলেছেন, তাদেরকে আমি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছি। এসবই অসত্য, রাবিশ। আমি নিয়াজিকে ব্ল্যাকমেল করিনি। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
প্রথম আলো: আত্মসমর্পণের দলিলের খসড়া কীভাবে তৈরি হলো?
জ্যাকব: আমার নিজের হাতেই টাইপ করা। আমি ১৩ ডিসেম্বরে যখন নিয়াজির সঙ্গে কথা বলা শুরু করি, তখনো আমার সরকারের তরফে কোনো কনফারমেশন ছিল না। আমি নিজেই উদ্যোগী ছিলাম।
প্রথম আলো: আইনগত দিক কীভাবে খতিয়ে দেখেছিলেন?
জ্যাকব: আমি বিশেষজ্ঞ ছিলাম না। কিন্তু ইতিহাসের আশ্রয় নিয়েছি। যেটা চূড়ান্ত হয়ে এল, সেটা আসলে আমারই, কেবল হেডিংটায় ভুল ছিল। খসড়াটি আমি দিল্লি পাঠাই।
প্রথম আলো: রেসকোর্স কেন বেছে নিলেন?
জ্যাকব: আমি তাঁকে বললাম, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে রেসকোর্স ময়দানে, জনতার সামনে। নিয়াজি বললেন, না। আমার অফিসে হবে। আমি বললাম, না, ওখানেই হবে। ঢাকার মানুষ উপস্থিত থাকবে। কারণ, তারাই বড় বেশি নির্যাতন ও নৃশংসতার শিকার হয়েছে। রেসকোর্সের সেই আত্মসমর্পণই ইতিহাসের একমাত্র পাবলিক সারেন্ডার।
প্রথম আলো: আত্মসমর্পণের দলিলে লেখা এমন কোনো শব্দ বা বাক্যের কথা আপনার মনে পড়ে, যা পাকিস্তানিদের অনুরোধে সংযোজন করা হয়েছিল?
জ্যাকব: না। জেনারেল রাও ফরমান আলী বরং চূড়ান্ত দলিল দেখে বললেন, কে বলেছে, আমরা যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছি। বাংলাদেশ কমান্ডের কাছে আমাদের আত্মসমর্পণের কোনো প্রশ্নই আসে না। বললাম, আমি আপনাদের কাছে যে খসড়া দিয়েছিলাম, তাতে জয়েন্ট কমান্ডই লেখা ছিল। আমি নিয়াজিকে বললাম, এর চেয়ে ভালো শর্ত দিতে আমরা অপারগ। আপনাকে ৩০ মিনিট সময় দিলাম। হয় আপনারা এটি মেনে নিন, অন্যথায় আবার শুরু হতে পারে সংঘাত। তখন ঢাকায় তাদের ২৬ হাজার সেনা। আর ৩০ মাইল দূরে আমাদের তিন হাজার সেনা অপেক্ষমাণ।
প্রথম আলো: আপনার জীবনের সর্বোত্তম মুহূর্ত কোনটি?
জ্যাকব: বেলা পৌনে দুটো। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। স্থান নিয়াজির অফিস। যখন আমি নিয়াজির টেবিল থেকে আত্মসমর্পণের দলিলটি হাতে তুলে নিই এবং কবরের নৈঃশব্দ্য ভেঙে বলি, ’আই টেক ইট এ্যাজ অ্যাকসেপ্টেড।’ অর্থাৎ আমি ধরে নিচ্ছি, পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করল।
প্রথম আলো: আরেকটু বিস্তারিত বলুন।
জ্যাকব: নিয়াজির সামনে যখন দলিলটি দিলাম, তখন মনে হলো তিনি তা নাকচ করছেন। আমাকে বলছেন, হোয়াট ডু আই ডু? ২৬ হাজার ৪০০ পাকিস্তানি সৈন্য তখন ঢাকায়। আর ঢাকার অদূরে আমাদের মাত্র ৩ হাজার সৈন্য। আর নিয়াজি কিনা বলছেন, হোয়াট ডু আই ডু? এর উত্তর তো আমার জানা ছিল না। তাঁকে ৩০ মিনিট সময় দিলাম। আমি ঘড়ি দেখছি। পায়চারি করছি। চাপা উত্তেজনায় টগবগিয়ে ফুটছি। তাঁকে বললাম, জেনারেল, এই টেবিলেই সই হবে। আপনি কি মেনে নিলেন? এই দলিল কি গ্রহণ করলেন? নিয়াজি কোনো জবাব দিলেন না। একাদিক্রমে তিনবার আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি নিরুত্তর থাকলেন। হ্যাঁ বা না কোনো ধ্বনিই উচ্চারিত হলো না। তারপরই ঘনিয়ে এল সেই মুহূর্ত। কাগজটি তুলে নিয়ে আচমকা উচ্চারণ করি: আই টেক ইট অ্যাজ অ্যাকসেপ্টেড। আমি ধরে নিচ্ছি, আপনি এটা গ্রহণ করেছেন। আমি অস্ফুটে বলে উঠি, থ্যাংক ইউ গড। মনে মনে প্রার্থনা করি, তাঁর কাছে। গড বা আল্লাহ যা–ই বলি, গড ইজ গড। তিনি আছেন। তিনি নিশ্চয় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি করুণা বর্ষণ করছেন। এরপর আমি পাবলিক সারেন্ডার, গার্ড অব অনার ইত্যাদির জন্য চাপ দেওয়া শুরু করি।
প্রথম আলো: নিয়াজি যে কলমটি দিয়ে সই করেন, সেটি কার ছিল?
জ্যাকব: আমার ধারণা কলমটি অরোরার ছিল।
প্রথম আলো: ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান পরিকল্পনার নায়ক ছিলেন আপনিই?
জ্যাকব: তা জানি না। তবে ঢাকার পতনের পরিকল্পনা আমার। আত্মসমর্পণের দলিলের খসড়া আমার তৈরি। স্থান নির্বাচন করেছি আমি। গার্ড অব অনারও হয়েছে আমার নিজস্ব পরিকল্পনায়। বহু পরে ভেবে দেখেছি, আশ্চর্য, আমার পরিকল্পনায় কোনো ভুল ছিল না। জাতিসংঘের আওতায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে আমি রূপান্তর করেছিলাম পাবলিক সারেন্ডারে।
(সংক্ষেপিত)
‘মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকাই বড় ছিল’,
প্রথম আলো, ১৬ ডিসেম্বর ২০০৮