পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথ ধরে খুলনার পথে রেল চলাচল শুরু হবে ২৪ ডিসেম্বর। ঢাকা থেকে কাশিয়ানী জংশন হয়ে খুলনা ও বেনাপোলে নতুন দুই জোড়া আন্তনগর যাত্রীবাহী ট্রেন দিয়ে যাত্রা শুরু হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান নতুন ট্রেন দুটির যাত্রা উদ্বোধন করবেন।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথ নির্মাণের ফলে ট্রেনে যাতায়াতে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে গেছে। এই পথে ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়া যাবে পৌনে চার ঘণ্টায়। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে যাতায়াতে সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকা-খুলনা পথে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ এবং ঢাকা-বেনাপোল পথে ‘রূপসী বাংলা’ নতুন রেলপথ দিয়ে চলাচল করবে। এ ট্রেন দুটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। দিনে দুইবার ঢাকা–খুলনা ও ঢাকা–বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেন দুটি।
রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ছয়টায়। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত আটটায়। খুলনায় পৌঁছানোর কথা ১১টা ৪০ মিনিটে। অন্যদিকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটির যশোরের বেনাপোল পৌঁছানোর কথা বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় যশোর থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।
বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনার পথে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি চলাচল করে। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় যাচ্ছে। এতে প্রায় আট ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়েই চলাচল করছে। এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। এর বাইরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে যশোরের বেনাপোলে যায়। এতে সময় লাগছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছর পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের সময় ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত নতুন লাইন চালু হয়। সে জন্য ঢাকা থেকে ভাঙা, রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে খুলনার পথে ট্রেন চালু করা হয়। এর মধ্যে যশোর পর্যন্ত পুরোটা নতুন রেলপথ চালু হয়েছে; কিন্তু সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস নতুন পথে চালু করার উদ্যোগ নিলে কুষ্টিয়ার স্থানীয় জনগণ বাধা দেন। আন্দোলনেরও হুমকি দেন।
এ পরিস্থিতিতে রেল কর্তৃপক্ষ সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস চলাচলের পথ ঠিক রেখে কাশিয়ানী হয়ে নতুন রেলপথ দিয়ে জাহানাবাদ ও রূপসী বাংলা চালু করছে। ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার পথে নতুন একটি ট্রেন চালু করা হবে। তখন সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস নতুন পথ দিয়ে চলাচল করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
রেলের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন রেলপথ দিয়ে খুলনা-যশোরে যেতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা সময় বেচে যাবে। ভবিষ্যতে যাত্রীচাহিদা ও ইঞ্জিন-কোচের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে ট্রেন আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। অবশ্য শুরুতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যয় সাশ্রয় করে ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বাঁচানো হয়েছে। আর ৬২২ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে ডিপিপি দ্বিতীয়বার সংশোধন করে।