নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নীতিমালায় পরিবর্তন আসছে
কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে চাইলে প্রথমে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করতে হয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নীতিমালায় সংশোধন আনার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর এই উদ্যোগ নিয়েছে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন এই সংস্থা।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ২০১৮ সালে একটি নীতিমালা করা হয়। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ওই নীতিমালাকেই ‘যুগোপযোগী’ করা হবে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠক করবে ইসি সচিবালয়। ২৩ আগস্ট ওই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বর্তমান নীতিমালাটি পর্যালোচনা করা হবে।
পর্যবেক্ষকদের পেশাদারত্ব বজায় রাখতে হবে, পর্যবেক্ষক দল (কোনো মিশন) আনুষ্ঠানিকভবে বক্তব্য দেওয়ার আগে পর্যবেক্ষকদের কেউ ব্যক্তিগতভাবে গণমাধ্যমে মন্তব্য করতে পারবেন না। পর্যবেক্ষকেরা ভোটকেন্দ্র থেকে ফেসবুক, টুইটার বা এ ধরনের কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি কিছু সম্প্রচার করতে পারবেন না।
ইসি সূত্র জানায়, ১০ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। সেখানে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে ‘যুগোপযোগী নীতিমালা’ প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য খসড়া নীতিমালা তৈরি করতে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন ও বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
■ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ২০১৮ সালে একটি নীতিমালা করে নির্বাচন কমিশন।
■ পর্যবেক্ষকেরা ভোটকেন্দ্র থেকে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি কিছু সম্প্রচার করতে পারেন না।
ইসির বর্তমান নীতিমালায় বলা আছে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কঠোরভাবে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে, পর্যবেক্ষণের সময় যথাযথ পরিচয় প্রদান করতে হবে, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রথমে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে হবে এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তার আইনানুগ নির্দেশনা মানতে হবে। পর্যবেক্ষকদের পেশাদারত্ব বজায় রাখতে হবে, পর্যবেক্ষক দল (কোনো মিশন) আনুষ্ঠানিকভবে বক্তব্য দেওয়ার আগে পর্যবেক্ষকদের কেউ ব্যক্তিগতভাবে গণমাধ্যমে মন্তব্য করতে পারবেন না। পর্যবেক্ষকেরা ভোটকেন্দ্র থেকে ফেসবুক, টুইটার বা এ ধরনের কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি কিছু সম্প্রচার করতে পারবেন না।
এ ছাড়া দেশীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য পৃথক নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী, নিবন্ধিত দেশি সংস্থাগুলোই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এবার ৬৮টি সংস্থাকে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই (নিবন্ধন) করেছে ইসি। নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৬৮টি সংস্থার মধ্যে কয়েকটির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। বেশির ভাগ সংস্থারই পর্যাপ্ত লোকবল নেই। ফলে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার মতো দক্ষতা ও সক্ষমতা দেশীয় এসব সংস্থার আসলেই আছে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।
বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা পর্যালোচনা করা হবে। এ লক্ষ্যে ২৩ আগস্ট আন্তমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক্-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় এসেছিল। তারা ইসিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে। তারা যে প্রতিবেদন দেবে, তার ওপর ভিত্তি করে ইইউ আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, আগামী অক্টোবরের শুরুতে তাদের প্রাক্–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় আসবে।
ইসি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক, বিশেষ করে ইইউর পর্যবেক্ষকেরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এলে ‘ভেহিক্যাল ট্র্যাকার’, (গাড়ি শনাক্তের প্রযুক্তি) ক্যামেরাসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম নিয়ে আসতে চান। সেগুলো আনতে হলে কোন প্রক্রিয়ায় আনা হবে, তা ইইউর প্রাক্-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল জানতে চেয়েছিল। এসব যন্ত্রপাতি আনার ক্ষেত্রে করারোপেরও একটি বিষয় আছে। ইসির বর্তমান নীতিমালায় সরঞ্জাম নিয়ে আসার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বৈঠক করে পর্যবেক্ষকদের সরঞ্জাম আনার বিষয়টি নীতিমালায় যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে।
বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না, তার বেশ কিছু নির্দেশনা বর্তমান নীতিমালায় দেওয়া আছে। সেখানেও কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে ইসির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে সেখানে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা পর্যালোচনা করা হবে। এ লক্ষ্যে ২৩ আগস্ট আন্তমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে।
বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে চাইলে প্রথমে ইসির কাছে আবেদন করতে হয়। ইসি সে আবেদন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ছাড়পত্রের জন্য তা পাঠিয়ে দেয় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ছাড়পত্র পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এরপর ভিসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক মিলিয়ে ছিলেন ৩৮ জন এবং কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ছিলেন ৬৪ জন। এ ছাড়া বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন (সবাই বাংলাদেশি) গত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
গত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশ–বিদেশে নানা প্রশ্ন ওঠে। ওই নির্বাচনের আগেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। পর্যবেক্ষকদের ভোটকেন্দ্রে ‘মূর্তির মতো থাকতে হবে’—তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের এমন বক্তব্য তখন সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।