শেখ হাসিনা, সাংবাদিকসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ করা হয়েছে। এতে সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, ২৯ সাংবাদিক, ২ জন অধ্যাপকসহ মোট ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৫ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডে নিহত হয় মিরপুরের বিসিআইসি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র নাসিব হাসান (১৭) নিহত হন। নাসিবের বাবা গোলাম রাজ্জাকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম আজ বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত সংস্থা অভিযোগটি গ্রহণ করেছে।

অভিযোগ দায়েরের আবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বিধান অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আবেদনে ঘটনার স্থান হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশ উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঘটনার তারিখ ও সময় হিসেবে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এবং ঘটনার তারিখে আহত হয়ে পরবর্তীকালে বিভিন্ন তারিখে নিহত বলে উল্লেখ রয়েছে।

আবেদনে অপরাধের ধরন বিষয়ে বলা হয়, আসামিদের প্ররোচনা ও উসকানিতে, পরিকল্পনায় ও নির্দেশে অন্য আসামিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে সাধারণ নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র–জনতাকে হত্যা, নির্যাতন, আটক, গুম করার মাধ্যমে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অপরাধ।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আবেদনে আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্‌মেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী আরাফাত, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্য, র‌্যাবের সাবেক ডিজি মো. হারুন অর রশিদ ও কিছু অসাধু র‌্যাব কর্মকর্তা-সদস্য, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, আদাবর থানার সাবেক ওসি মো. মাহাবুব রহমান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আইনজীবী নিঝুম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামালের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আবেদনে আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু, এবি নিউজ২৪ডটকমের সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়, সময় টিভির আহমেদ জুবায়ের, এখন টিভির বার্তাপ্রধান তুষার আবদুল্লাহ, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, সমকালের সাবেক সম্পাদক আবেদ খান, এটিএন নিউজের সাবেক বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিন, একাত্তর টিভির সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপা, একাত্তর টিভির সাবেক বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ, ডিবিসির সম্পাদক জায়েদুল হাসান পিন্টু, ডিবিসির প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীস সৈকত, এশিয়ান টিভির হেড অব নিউজ মানস ঘোষ, ডিবিসির প্রণব সাহা, সাবেক তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি, এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নি সাহা, এটিএন বাংলার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, চ্যানেল আইয়ের সোমা ইসলাম, ইত্তেফাকের শ্যামল সরকার, সমকালের অজয় দাশ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন এবং নবনীতা চৌধুরী ও মিথিলা ফারজানার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

এ নিয়ে ১৪ আগস্ট থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক আটটি অভিযোগ তদন্ত সংস্থায় জমা দেওয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন) আতাউর রহমান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত আটটি অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে সাতটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহতের ঘটনা নিয়ে। অপরটি হচ্ছে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ঘিরে গণহত্যার অভিযোগ। অভিযোগগুলোর তদন্ত হচ্ছে, এর মধ্যে সাতটির তদন্ত একসঙ্গে হচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ঘিরে গণহত্যার অভিযোগ আলাদা করে তদন্ত করা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হলে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানো হবে।

আরও পড়ুন