শীতের ওম মেখে পার্কে, উদ্যানে
গরমে ঘামে ভিজে জবজবে হওয়ার ভয় নেই। বৃষ্টিতে ভিজে কিংবা কাদামাটিতে মাখামাখি হওয়ার যন্ত্রণাও নেই। শীতকালের এমন শান্ত, শীতল আবহাওয়ায় ঘুরতে পছন্দ করেন অনেকে। পার্কে কিংবা খোলা ময়দানে হাঁটাহাঁটি ও শরীরচর্চা বাড়ে। বাড়ির পাশের পার্কে, উদ্যানে মানুষের যাতায়াত বেড়ে যায়।
ধানমন্ডি লেক
ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এই লেকটির আয়তন প্রায় ৮৬ একর। এর মধ্যে ৩১ একর স্থলভাগ, ৫৫ একর জলভাগ।
দেখার কী আছে: রবীন্দ্রসরোবরই মূল আকর্ষণ। লেকের ওপর একটি সেতু আছে। কৃষ্ণচূড়া, বট, রেইনট্রিসহ হরেক রকমের গাছের ফাঁকে ফাঁকে লেকটি ঘিরেই রয়েছে বেশ কিছু বসার স্থান। সম্প্রতি ব্যক্তি উদ্যোগে ধানমন্ডি লেকের কিছু গাছে স্থাপন করা হয়েছে কাঠের তৈরি বইয়ের বাক্স। সেখানে বসে বইও পড়া যায়।
আরও আয়োজন: রবীন্দ্রসরোবর প্রায়ই আড্ডা, গানে জমে থাকে। লেকের নির্দিষ্ট একটি জায়গা ব্যায়ামের জন্য নির্ধারিত, আছে কিছু সরঞ্জামও। সকালে নানা বয়সী মানুষ এখানে শরীরচর্চার জন্য আসেন। লেকে প্যাডেলচালিত ছোট ছোট নৌকায় করে ঘোরার ব্যবস্থাও আছে।
লেকের ধার ঘেঁষে, এমনকি লেকের মধ্যে গড়ে উঠেছে কয়েকটি রেস্তোরাঁ। চা, কফি, ফুচকা ও চিকেন চপ–লুচিই এসব রেস্তোরাঁয় বেশি
বিক্রি হয়।
রমনা পার্ক
রাজধানীর রমনা এলাকায় অবস্থিত। রমনা পার্কের আয়তন প্রায় ৬৮ দশমিক ৫ একর।
দেখার কী আছে: রমনার বটমূলে প্রতিবছর বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটি প্রায় শতবর্ষী একটি বৃক্ষ। এ ছাড়া কুসুমবৃক্ষ, মণিমালা ফুল, বাওবাবগাছ, শ্বেতকাঞ্চন বীথিসহ এখানে প্রায় ১৭০ প্রজাতির ৩ হাজার ৫০০টি গাছ রয়েছে। পার্কের পথ ধরে হাঁটলে হরহামেশাই দেখা মেলে কাঠবিড়ালি ও টিয়া পাখির। এখানে একটি লেক ও সেতু রয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সামনে নামফলক থাকায় অনেক বৃক্ষপ্রেমী এখানে গাছ চিনতে আসেন।
আরও আয়োজন: বিভিন্ন বয়সী মানুষ প্রাতর্ভ্রমণ ও বৈকালিক ভ্রমণ করতে পারে। রমনায় শরীরচর্চা করতে আসা ব্যক্তিরা গড়ে তুলেছেন কয়েকটি সংগঠন। নারীদের জন্যও রয়েছে মহিলা অঙ্গন নামের একটি সংগঠন।
শিশুদের জন্য আয়োজন: শিশুদের জন্য একটি ছোট পার্ক আছে। বিকেলে শিশুরা এখানে খেলাধুলায় মেতে ওঠে।
সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত, ২ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।
চন্দ্রিমা উদ্যান
জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর পাশে এই উদ্যানের অবস্থান। আরেক দিকে রয়েছে গণভবন। উদ্যানটির আয়তন ৭৪ একর।
দেখার কী আছে: উদ্যানের মাঝবরাবর আছে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স। ক্রিসেন্ট লেকের ওপর ঝুলন্ত সেতুটিও দেখার মতো।
আরও আয়োজন: সকালে শরীরচর্চার জন্য আশপাশের এলাকার মানুষ এখানে আসেন। সমাধি কমপ্লেক্স দেখতেও সারা দিন মানুষের সমাগম থাকে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত। একসময় রমনা রেসকোর্স ময়দান নামেও পরিচিত ছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আয়তন প্রায় ৬৮ একর।
দেখার আছে: নাগেশ্বর, অশোকসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। লেকের পাশের স্বাধীনতা স্তম্ভ ও শিখা চিরন্তন
মূল আকর্ষণ।
আর কী আছে: উদ্যানের ভেতরে ও বাইরে পাওয়া যায় মুখরোচক খাবারদাবার। বিকেলে ঢাকার নানা প্রান্তের মানুষ এখানে ঘুরতে আসে।
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। সিলেট শহরতলির খাদিমনগর এলাকায় অবস্থিত।
সংরক্ষিত বন: বন বিভাগের আওতাধীন খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান সংরক্ষিত বন। বনের চারপাশে বেশ কয়েকটি চা–বাগান রয়েছে। ১ হাজার ৬৭৭ একরের উদ্যানে ২১৭ প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ রয়েছে।
দেখার মতো কী আছে: টিলাগড় ইকোপার্কে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ২০ প্রজাতির উভচর, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৮ প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের পাখি রয়েছে। এ ছাড়া বানর, হনুমান, মেছোবাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে।
আর কোনো ব্যবস্থা: উদ্যানে রাতে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপনসহ খাবারের ব্যবস্থাও আছে। আছে উদ্যানের ঘন জঙ্গলে ট্র্যাকিং, গাছে ওঠার জন্য জিপলাইন (গাছে দড়ি বেঁধে চলাচলের ব্যবস্থা), গাছে দড়ির সঙ্গে কাঠ ঝুলিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা।
সিআরবি শিরীষতলা
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের বিশালাকায় শিরীষ, অর্জুন ও শিমুলগাছ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আবদুর রবসহ সাতজনের কবর রয়েছে এখানে। সিআরবি শিরীষতলাকে বলা হয় চট্টগ্রাম নগরের ফুসফুস। মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চলীয়) মহাব্যবস্থাপকের নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং থেকে নামকরণ হয় সিআরবি। ব্রিটিশ–ভারতে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের প্রধান কার্যালয় ছিল এটি।
দেখার মতো কী আছে: খুব ভোরে এখানে এলে এই শীতে কুয়াশার চাদর ভেদ করা সূর্যের আলোর ঝলক দেখতে পাবেন। চায়ের কাপে চুমুক দিতে আশপাশের টং দোকানগুলোয়
ঢুঁ মারতে পারেন। সারা দিনই এই এলাকায় মানুষের আনাগোনা। তবে বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় এলে তরুণদের গানের আড্ডাও কানে আসবে।
ব্যায়ামের স্থান: বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য সকালে এখানে জগিং ও ব্যায়াম করার পর্যাপ্ত স্থান রয়েছে। শিশুদের জন্য শিরীষতলায় রয়েছে মাঠ। এর চারপাশে আছে ওয়াকওয়ে ও বসার স্থান। নগরের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো গণপরিবহনে এখানে আসা যায়।
শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান
রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানাধীন শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীর পাশে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: উদ্যানের আয়তন প্রায় ৩৩ একর। ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা ঘোড়দৌড় বা রেস খেলার প্রচলন করে। খেলা দেখা ও বাজি ধরায় প্রচণ্ড উত্তেজনা সৃষ্টি হতো। শহরাঞ্চলেই ঘোড়দৌড় মাঠ বা রেসকোর্স ছিল। রেসের নেশায় দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসত। এখন এই রেসকোর্স ময়দান রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান।
দেখার কী আছে: উদ্যানজুড়ে কয়েক হাজার ছোট–বড় গাছ রয়েছে। গত কয়েক বছরে এখানে বিরল প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় গাছের মধ্যে রয়েছে আগর, রক্তচন্দন, নাগলিঙ্গম, সিভিট, কফি, অড়বরই, পারুল, কর্পূর, ফলসা, সিঁদুর ইত্যাদি। উদ্যানের ভেতর দীর্ঘ একটি লেক রয়েছে। লেকে রয়েছে রঙিন মাছ।
শিশুদের জন্য কী আছে: উদ্যানটিতে সকাল–বিকেল হাঁটতে যান লোকে। শিশুদের জন্য মিনি ট্রেন, সোয়ান বোর্ড, নাগরদোলাসহ বেশ কিছু রাইড আছে। শীতে অতিথি পাখি আসে। তখন পাখিপ্রেমীরা উদ্যানটিতে যান।
উদ্যানটি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশমূল্য ২৫ টাকা।
তথ্য: মো. জান্নাতুল নাঈম, ঢাকা ; শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী; মানাউবী সিংহ, সিলেট; ফাহিম আল সামাদ, চট্টগ্রাম