বন্যার্তদের সহযোগিতায় সব এনজিওকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ: ড. ইউনূস

দেশের শীর্ষ এনজিও–প্রধানদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক। ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০২৪ছবি: বাসস

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব বেসরকারি সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন কাজটি সবাইকে বিচ্ছিন্নভাবে না করে একসঙ্গে করার নির্দেশ দেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটায় দেশের শীর্ষ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ড. ইউনূস। বৈঠক চলে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত।

চলমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করণীয়, পানি নেমে গেলে কীভাবে কাজ করা যেতে পারে—এসব নিয়ে আলোচনা করতেই এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অন্যদিকে এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে কথা বলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।

আসিফ সালেহ বলেন, বৈঠকে চলমান বন্যায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ কার্যক্রমে সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় অনেকে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে না। ত্রাণ দেওয়ার সময় অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

ব্র্যাকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বন্যাপরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনে প্রচুর তহবিলের প্রয়োজন হবে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক হাজার কোটি টাকার মতো লাগতে পারে বলে একটি এনজিওর প্রতিনিধি প্রাথমিক ধারণা দিয়েছেন। প্রবাসী যাঁরা আছেন, তাঁরা অনেকে টাকা পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাঁদের দেওয়া টাকা দিয়ে একটি তহবিল করা যেতে পারে। তহবিলের বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে বন্যাপরবর্তী সময়ে কত টাকা লাগবে, তা নিয়ে কাজ চলছে। বৈঠকে বিদ্যুৎ সংযোগ, মোবাইল টাওয়ার সচল করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসিফ সালেহ।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় এনজিওগুলো যাতে সমন্বিতভাবে কাজ করে, সে বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পানি নামতে শুরু করেছে।

এই মুহূর্তে এনজিওদের সঙ্গে বৈঠকের কারণ জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উপকূলে কাজ করছে এনজিওগুলো। এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের অভিজ্ঞতা আছে। তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিতেই এ বৈঠক ডাকা হয়েছে।

দেশের দক্ষিণ ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলে ২০ আগস্ট থেকে বন্যা শুরু হয়। বন্যায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। পানিবন্দী হয়ে আছে সাড়ে ৯ লাখের মতো মানুষ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য ও খাদ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সব পক্ষ মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করার রূপরেখা নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলমান বন্যা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় কোথাও ত্রাণ যাচ্ছে, আবার কোথাও যাচ্ছে না। সবখানে যাতে ত্রাণ যায়, সেটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে এনজিওদের মধ্যে কমিটি করার তাগিদ দেওয়া হয়।’