চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড়
কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে। কেউবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। গাছের ছায়ায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখি দেখছেন। এভাবে ঈদের দিন কাটিয়েছেন রাজধানীর মিরপুরে চিড়িয়াখানায় আসা হাজারো দর্শনার্থী।
আজ সোমবার দুপুরে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেল, দর্শনার্থীদের একটি বড় অংশ শিশু। কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
চিড়িয়াখানার বিভিন্ন খাঁচায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, পাখি ও সাপ সংরক্ষণ করা আছে। সেসব খাঁচা ঘুরে ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। এক খাঁচার পাখি-প্রাণী দেখা শেষ হলে অন্যটির উদ্দেশে ছুটছেন তাঁরা।
চিড়িয়াখানার পুরো এলাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় ভরা। তীব্র রোদে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন অনেক দর্শনার্থী।
চিড়িয়াখানায় মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পরে পাখির খাঁচা। বক, কালেম পাখি, গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো, পেলিকানসহ বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক শ পাখি রয়েছে সেই খাঁচায়। সেখান থেকে বাঁ দিকে এগোলেই বাঘ–সিংহের খাঁচা।
শিশুদের অনেকেই বাঘের খাঁচার বাউন্ডারির রেলিং ধরে বাঘ দেখেছে। কেউ মা-দাদির কোলে করে, আবার কেউমা বাবা–মা–মামার কাঁধে উঠে বাঘ দেখছে।
বাঘের একটি খাঁচার সামনে কথা হয় মো. শিবলু নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। কাজের সুবাদে থাকেন ঢাকার কাপ্তান বাজারে। এবার পরিবার নিয়ে ঈদ ঢাকাতেই করছেন। স্ত্রী, ভাবি, দুই ছেলে ও এক ভাগনেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন।
শিবলু প্রথম আলোকে বলেন, চিড়িয়াখানায় আসার জন্য বাচ্চারা কান্না করছিল। স্ত্রীও আসতে চাইছিলেন। তাই সবাইকে নিয়ে এসেছেন। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের দিন ভালোই কাটছে।
শিবলুর ভাগনে ইসমাইল হোসেনের বয়স ছয় বছর। সে প্রথম আলোকে বলে, ‘চিড়িয়াখানায় এসে এখন পর্যন্ত বাঘ, হরিণ ও বানর দেখেছি। সবই আমার খুবই ভালো লেগেছে। আরও ঘুরব। ঘুরে ঘুরে দেখব।’
কথা হয় মো. হাসান নামের আরেক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় কর্মস্থলে ঈদ করছেন। ২২ জন বন্ধু সাইনবোর্ড এলাকা থেকে চিড়িয়াখানায় এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাইনি, তাই বন্ধুরা মিলে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছি।’
হাসানের সঙ্গে কথা বলার সময় সাত বন্ধু একসঙ্গে ছিলেন। অন্যরা চিড়িয়াখানার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি বলেন, চিড়িয়াখানার ভেতরের জায়গা অনেক সুন্দর। লেকও আছে; বিভিন্ন ধরনের পাখি-প্রাণী তো আছেই। তা ছাড়া সব বন্ধু মিলে এসেছেন। তাই ঈদের দিন বেশ আনন্দেই কাটছে।
তাঁদের সঙ্গে আসা মো. মিরাজ বলেন, তিনি লেকের পাড়ে অনেকক্ষণ বসে ছিলেন। তাঁর খুব ভালো লেগেছে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, সিংহ, বানর, জলহস্তী, কুমির, সাপ, ইম্পালা, গয়াল, লামা, ময়না, টিয়া, ক্যাঙারু, জিরাফ, জেব্রা, হাতি, ময়ূর, উটপাখি, ইমু, শঙ্খচিল, কুড়াবাজ, তিলাবাজ, গন্ডার, হায়েনাসহ ১৩৬ প্রজাতির ৩ হাজার ৩৪টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে এখানে।
এসব প্রাণী দেখতে ঈদের ছুটিতে প্রতিবছর ঢল নামে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চিড়িয়াখানায় ঈদের দিন দর্শনার্থীদের চাপ কিছুটা কম।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, আজ চিড়িয়াখানায় ৭০ হাজারের মতো দর্শনার্থী হয়েছিল, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।