মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁরাই স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সমন্বিত তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁরাই বৈধ বা স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ, ভর্তি, ব্যাংকঋণ, চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে এই তালিকা অনুসরণ করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত তালিকায় ১ লাখ ৯২ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সমন্বিত তালিকা বিবেচনায় কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হলে প্রত্যয়ন পেতে তাঁকে আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে না। প্রতিটি মন্ত্রণালয় বিষয়টি যাচাই করে নেবে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্মতারিখ ১৯৫৯ সাল বা এর আগে হতে হবে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর ১২ বছর ৬ মাস অথবা এর আগে হতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব মুক্তিযোদ্ধার বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ, ভর্তি, ব্যাংকঋণ, চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাতে পারবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখা বলছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৭ জনের নাম বিভিন্ন সময়ে গেজেটভুক্ত হয়েছিল। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা বলছে, গত জানুয়ারি মাসে ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ভাতা (মাসিক সম্মানী) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের মার্চ মাসে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা (অপূর্ণাঙ্গ) সরকার প্রকাশ করেছিল। ফলে দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কত, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত তালিকায় ১ লাখ ৯২ হাজার জনের নাম রয়েছে। এঁদের প্রায় ৩৭৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আর্থিক মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে গত জুলাই মাসে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সম্মানী ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রত্যয়নপত্র পেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যেন আর আসতে না হয়, সে জন্য সমন্বিত তালিকায় প্রকাশিত নামই বৈধ বা স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল (জামুকা) বলছে, নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণের জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণক (কাগজপত্র) লাগে। অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামই একেক নথিতে একেক রকম। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নামই শেষ পর্যন্ত বিবেচনায় নেওয়া হয়। অনেকের পরিচয়পত্রে দেওয়া নাম আর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম এক না থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছে। যে কারণে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে সময় লাগছে।