বরিশালে শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরা কৃতী শিক্ষার্থীদের আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
আজ সকাল থেকেই বরিশাল নগরে শরতের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। মেঘের আনাগোনায় ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি থাকলেও কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মশহরে কৃতী শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয় শিল্পকলা একাডেমির চত্বর। অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৃথক বুথ থেকে বন্ধুসভার সদস্যদের কাছ থেকে স্ন্যাকস ও ক্রেস্ট সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা। পরে তারা একাডেমির চত্বর ও মুক্তমঞ্চ ঘুরে দেখে। অনেক দল বেঁধে ছবি তোলে। কেউবা মাতে সেলফিতে। অনেক দিন পর বন্ধু ও সহপাঠীরা একসঙ্গে হয়ে তারা গল্পে-আড্ডায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে। ঘড়ির কাঁটায় ১০টা বাজতেই শুরু হয় জাতীয় সংগীত। কানায় কানায় পরিপূর্ণ বিশাল মিলনায়তনে কৃতী শিক্ষার্থী ও অতিথিরা দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে গলা মেলান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বরিশালে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বরিশালের প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শাহ সাজেদা, বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ, বরিশালের বেসরকারি ইনফ্রা পলিটেকনিকের পরিচালক আমীর হোসাইন, প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আজকের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। কথায় নয়, সততার সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশকে জয়ী করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগোতে হবে। মানবিক ও কৃতজ্ঞ মানুষ হতে হবে।
অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘তোমাদের কৃতজ্ঞ মানুষ হতে হবে। তোমাদের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর মানুষ যেমন হতে হবে, তেমনি মাতৃভূমি বাংলাদেশ, মা-বাবা, পরিবারের স্বজন-প্রতিবেশীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষা শিখতে হবে, জানতে হবে। শুধু পড়াশোনায় ভালো হলেই শুধু চলবে না। পরম সহিষ্ণু, বিনয়ী ও মানবিক মানুষ হতে হবে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরিশ্রম করতে হবে।’
প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আগে বলতাম, তোমরা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবে। আমি বলব, এখনই তোমরা নেতৃত্ব দিচ্ছ। কারণ, তোমাদের হাতে প্রযুক্তি রয়েছে। এই প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে তোমরা বাংলাদেশকে স্বপ্নের সমান করে এগিয়ে নেবে। আমরা সেই আস্থা তোমাদের প্রতি রাখতে চাই।’
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিক্ষাজীবনে প্রথমবার এমন সংবর্ধনা পেয়ে অনেক কৃতী শিক্ষার্থী ভালো লাগার অনুভূতির কথা জানায়। বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে আসা কৃতী শিক্ষার্থী মো. বায়েজিদ মীর বলে, ‘কৃতীদের নিয়ে প্রথম আলোর এই আয়োজন আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। এভাবে আমাদের সংবর্ধিত করায় ভবিষ্যতে ভালো ফলাফলে ধারাবাহিকতা রক্ষায় সাহায্য করবে।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বরিশাল বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মিথুন রায় ও তাঁর দল। অনুষ্ঠানে একক নৃত্য পরিবেশন করেন বরিশাল বন্ধুসভার সদস্য সূবর্ণা কর্মকার এবং দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন বরিশাল বন্ধুসভার সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ও তাঁর দল।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার দেড় হাজার কৃতী শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। দেশের ৬৪ জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।