হামলা-লুটপাট বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান ৫৬ বিশিষ্ট নাগরিকের

সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাট, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছেছবি: প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হামলা ও লুটপাট বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ৫৬ বিশিষ্ট নাগরিক। বুধবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরশাসন দেশে এমন এক ভয়ংকর অবস্থা তৈরি করেছিল যে সরাসরি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থী ও নিরীহ জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। দুর্নীতি, হানাহানির মাধ্যমে সমাজে এক গভীর বিভেদের ক্ষত তৈরি হয়েছে। ছাত্র-জনতার শহীদি আত্মত্যাগে সেই শাসনব্যবস্থা উৎখাত হয়েছে।

বিশিষ্ট নাগরিকেরা আরও বলেন, গণবিরোধী আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরা নিজেরা নিরাপদে সরে গেলেও বাংলাদেশকে রেখে গেছেন চরম নৈরাজ্যকর এক পরিস্থিতিতে। যার ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে দেশবাসীকে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের কবল থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গণধোলাই ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এতে বিশেষ আতঙ্কে পড়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী, আদিবাসীসহ নানা লিঙ্গ ও বর্ণের মানুষ। অনেক মন্দির, বাসভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানে হামলা করা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যম এবং ভুক্তভোগী সূত্রে জানতে পেরেছি। কোথাও কোথাও তাঁদের ওপর শারীরিক নিপীড়নও চালানো হচ্ছে।’

এসব সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, পুলিশ বাহিনী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসন টিকিয়ে রাখতে নির্বিচার গুলি চালালেও এখন তারা কর্মবিরতিতে আছে। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জানমাল অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা অবাধে লুটপাট, ডাকাতি, হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।’

মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেন, অবিলম্বে পুলিশের সব সদস্যসহ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিজ উদ্যোগে সক্রিয় হতে হবে। মানুষের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা দিতে হবে। চাকরিবিধি অনুযায়ী তাদের যে পবিত্র দায়িত্ব, কোনো অবস্থায় তা থেকে বিরতি নেওয়া যায় না। অতীতের মতো আবারও যদি পুলিশ জনগণের ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশ গভীর অনিশ্চয়তায় ডুবে যাবে।

বিবৃতিতে নাগরিকেরা বলেন, শত শত মানুষের প্রাণহানির মাধ্যমে অর্জিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা যেন অঙ্কুরে বিনষ্ট না হয়, সে জন্য দল-মতনির্বিশেষ সবাইকে যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরমতসহিষ্ণুতা, ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।

৫৬ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে গিয়ে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, সংঘাত পরিহারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সব শ্রেণি, পেশা, বিশ্বাসের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ ড. আজফার হোসেন, সাংবাদিক ও গবেষক আবু সাঈদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, কবি কাজল শাহনেওয়াজ, নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম প্রমুখ।