বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ

এবার ৩.০৩ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের প্রভাব ‘কম’ ক্যাটাগরিভুক্ত দেশে রয়েছেছবি: আইইপি ওয়েবসাইট থেকে

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ৩ ধাপ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের ঘটনা এবং এ–সংক্রান্ত হতাহতের ঘটনা আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে কমেছে।

সিডনিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের (আইইপি) বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক বা জিটিআই ২০২৫-এ এমন চিত্র উঠে এসেছে। বুধবার নিজেদের ওয়েবসাইটে এ বছরের সূচক প্রকাশ করেছে আইইপি।

এবারের জিটিআই তৈরি করতে ১৬৩টি দেশের তথ্য খতিয়ে দেখেছে আইইপি। জিটিআই ২০২৫-এর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। স্কোর ৩.০৩। আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩২তম। সন্ত্রাসবাদ কমায় আগের বছরের তুলনায় এবার বাংলাদেশ জিটিআইয়ে ৩ ধাপ উন্নতি করেছে।

জিটিআইর মোট স্কোর ১০। শূন্য স্কোর মানে সন্ত্রাসবাদের কোনো প্রভাব নেই। স্কোর ২–এর মধ্যে হওয়ার অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশটিতে সন্ত্রাসবাদের প্রভাব ‘বেশ কম’। স্কোর ২ থেকে ৪–এর মধ্যে হলে সন্ত্রাসবাদের প্রভাব ‘কম’ বলে ধরা হয়। স্কোর ৪ থেকে ৬–এর মধ্যে হলে ‘মধ্যম’, ৬ থেকে ৮–এর মধ্যে হলে ‘বেশি’ এবং ৮ থেকে ১০–এর মধ্যে ‘খুব বেশি’ সন্ত্রাসবাদের প্রভাবভুক্ত দেশ ধরা হয়। এবার ৩.০৩ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ‘কম’ শ্রেণিভুক্ত দেশে রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এ অঞ্চলে এবারও সবচেয়ে খারাপ অবস্থান পাকিস্তানের। ৮ দশমিক ৩৭৪ স্কোর নিয়ে বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচকে ২০২৫ সালে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় খারাপ স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। ৭ দশমিক ২৬২ স্কোর নিয়ে বিশ্বে দেশটির অবস্থান নবম। এই অঞ্চলে তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতের স্কোর ৬ দশমিক ৪১১। বিশ্বে দেশটির অবস্থান ১৪তম। দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম স্থানে থাকা নেপালের স্কোর ১ দশমিক ১১৩। বিশ্বে দেশটির অবস্থান ৬৮তম।

২০২৪ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা আগের বছরের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯৯টি। ২০২৩ সালে তা ছিল ৭২৬টি। ২০২৩ সালে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৯৬১। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০৩ জন।

জিটিআই ২০২৫-এ শীর্ষ ১০টির দেশের দুটি দক্ষিণ এশিয়ার। দেশ দুটি হলো পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের এবার জিটিআই স্কোর শূন্য।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে শ্রীলঙ্কা। ২০১৯ সালের পর দেশটিতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা বা এ ধরনের হামলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। সন্ত্রাসী হামলায় উন্নতি হওয়ার দিক থেকে এ অঞ্চলে শ্রীলঙ্কার পরে রয়েছে নেপাল। দেশটিতে এ নিয়ে টানা দুই বছর কোনো সন্ত্রাসী হামলা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

২০২৪ সালে বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া দেশের সংখ্যা ৫৮ থেকে বেড়ে ৬৬–তে পৌঁছেছে। এসব দেশে অন্তত একটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। ২০১৮ সালের পর কোনো এক বছরে এত বেশি দেশে আর সন্ত্রাসী হামলা হয়নি। ২০২৪ সালে ৪৫টি দেশের পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় অবনতি হয়েছে। উন্নতি হয়েছে ৩৪টি দেশের অবস্থা।

বিশ্বে ২০২৪ সালে চারটি সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার জন্য চারটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়েছে। গোষ্ঠীগুলো হলো ইসলামিক স্টেট (আইএস), জামাত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম), তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও আল-শাবাব। ২০২৪ সালে এসব গোষ্ঠীর সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনায় আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর তাদের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ৪ হাজার ২০৪ জন। ২০২৩ সালে গোষ্ঠীগুলো বিশ্বের ২৯টি দেশে সক্রিয় ছিল। গত বছর তারা সক্রিয় ছিল ৩০টি দেশে।

আরও পড়ুন

জিটিআই ২০২৫ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মতো গত বছরও আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসবাদজনিত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালে বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলায় যত মানুষ মারা গেছে, তার অর্ধেকের বেশি মারা গেছে এ অঞ্চলে। গত বছর বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ১৯ শতাংশই হয়েছে অঞ্চলটিতে। একই সঙ্গে ২০২৪ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসবাদজনিত সহিংসতার শিকার শীর্ষ ১০ দেশের পাঁচটি সাহেল অঞ্চলের।

সাহেল অঞ্চলের বুরকিনা ফাসো ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসবাদের শিকার দেশের তকমা পেয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা যথাক্রমে ২১ ও ৫৭ শতাংশ কমেছে। তা সত্ত্বেও ২০২৪ সালে বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলায় যত মানুষ মারা গেছে তার প্রায় এক-পঞ্চমাংশই মারা গেছে দেশটিতে।

আরও পড়ুন