২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর: নিষ্কাশনব্যবস্থার ঘাটতি, পানি নামছে ধীরে

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের রাজিবপুর গ্রামে ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন এক ব্যক্তি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

আকস্মিক বন্যার পানি সাধারণত দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নেমে যায়। দেশের সিলেট বিভাগ ও তিস্তা অববাহিকায় প্রতিবছরই একাধিকবার আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। তা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে।

ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলো আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে এক সপ্তাহের বেশি সময় হলো। পানি কমছে, তবে তা ধীরগতিতে। বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো পানিবন্দী। নদীবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার পানি দ্রুত না নামার কারণ ওই অঞ্চলের ভূমিরূপ ও পানি সরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. মুনসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় সাম্প্রতিকালে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা কাজে ভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকার পানিনিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক খাল এবং নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে পানি নামতে দেরি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

বুয়েটের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), যুক্তরাজ্যের ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউথহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডসের ইতর্যাখত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক যৌথভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভূমির গঠন নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন ২০২২ সালে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অব টোটাল এনভায়রনমেন্ট–এ প্রকাশিত ওই গবেষণায় বাংলাদেশের উপকূলে আসা পলি দিয়ে গঠিত মেঘনা অববাহিকার ভূমির গঠনের বিষয়টিকে সামনে আনা হয়। বলা হয়, উপকূলে আসা পলির ২২ থেকে ৫০ শতাংশ ভূমিতে জমা হয়।

ওই গবেষক দলে ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক মো. মুনসুর রহমান। গবেষণায় আরও বলা হয়, ১৯৮৫ সালে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মুহুরী স্লুইসগেট এবং ২০১৫ সালে একই নদীর ওপর নির্মিত মুসুপুর ‘ক্রস-ড্যামগুলো’ পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আরেকটি বড় কারণ।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) উপদেষ্টা ও নদীবিশেষজ্ঞ মমিনুল হক সরকার ৩০ বছর ধরে নদী ও পানিপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণা পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দেশের পূর্বাঞ্চলের নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে ভূমি মূলত সমতল ও নতুন পলি দিয়ে গঠিত। সিলেটের আকস্মিক বন্যার পানি এসে দ্রুত তা হাওরে ছড়িয়ে পড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঢলের পানি ঢালু ভূমিরূপের কারণে দ্রুত নেমে যায়।

মমিনুল হক সরকার বলেন, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ভূমি সমতল ও নরম হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকছে। গত তিন যুগে সেখানে বড় বন্যা হয়নি। ফলে বন্যার পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের এবারের বন্যা থেকে শিক্ষা নিয়ে ওই এলাকায় পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তাদের হিসাবে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৬ লাখের বেশি মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি পরিবার পানিবন্দী ছিল।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কারণ, ফেনী ও কুমিল্লায় এবং উজানে ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি কমে এসেছে। তবে ২৯–৩০ আগস্টের মধ্যে ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের কুমিল্লা-ফেনীর দিকে আবারও বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তবে তা এর আগের বন্যা সৃষ্টিকারী বৃষ্টির মতো অতটা প্রবল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।