সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগে স্থিতিশীল নীতি জরুরি: সিপিডি

সিপিডি আয়োজিত ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ: বাংলাদেশে কীভাবে চীনের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যায়?’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। ঢাকা, ১৭ অক্টোবরছবি: বিজ্ঞপ্তি

৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) বাতিল হওয়ায় এই বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা দূর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ‘বিপরীত নিলাম’ পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করতে পারে বলে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি বলেছে, সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগে সরকারের নীতি স্থিতিশীলতা জরুরি।

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ বৃহস্পতিবার ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ: বাংলাদেশে কীভাবে চীনের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যায়?’ শীর্ষক সেমিনারে সিপিডি এই সুপারিশ করেছে।

দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে নতুন কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে দরপত্র ছাড়া চুক্তির জন্য আগের সরকারের অনুমোদিত নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক ৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র বাতিল হয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ইতিমধ্যেই জমি কেনাসহ আরও কিছু বিনিয়োগ করেছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগের মধ্যে আছে।

আজ সেমিনারের শুরুতে একটি নিবন্ধ তুলে ধরেছে সিপিডি। এতে সুপারিশ করা হয়, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ‘বিপরীত নিলাম’ পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করতে পারে সরকার। সাধারণত, দরপত্রে নিয়মানুযায়ী সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পেয়ে থাকেন। বিপরীত নিলামের ক্ষেত্রে সরকার একটি দর নির্ধারণ করে দেবেন। এরপর যাঁরা ওই দরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জয়ী হবেন, তাঁরা কাজটা পাবেন। এতে চীনা বিনিয়োগসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩৭টি কেন্দ্র এ দরপত্রে অংশ নিতে পারে। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে মুদ্রা অদলবদলের সুযোগ, দেশীয় ব্যাংক থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, রাজস্ব বাড়াতে না পারলে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। নীতি সংস্কারের পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও জোর দেওয়া হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন অপরিহার্য বিষয়। কর ছাড়া তো কোনো ব্যবসা নেই বিশ্বে। ব্যবসায় থেকে আয়ের একটি অংশ কর হিসেবে নেওয়া হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন স্থগিত করায় সম্মতিপত্র বাতিল হয়েছে বলা যায়। তবে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের কীভাবে যুক্ত করা যায়; সেটি বিবেচনায় আছে বিদ্যুৎ বিভাগের। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করে চুক্তি সম্পন্ন করা হবে।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, ৩৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মতিপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। ইতিমধ্যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ হয়েছে, তাই সরকারের সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করা উচিত।

সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। এ ছাড়া বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক নীতি তৈরি করতে হবে।

আইইইএফএ বাংলাদেশের জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করতে চায় না। তাই অর্থায়নে বিশেষ তহবিল করা দরকার। আমদানি শুল্ক না কমালে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।