র‍্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু : উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে

সুলতানা জেসমিন
ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাব হেফাজতে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪০) মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি আজ রোববার হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। আগামী ১৫ অক্টোবর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। তিনি  সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি জানান।

আরও পড়ুন

এর আগে গত ৫ এপ্রিল র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের (৪০) মৃত্যুর পুরো ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নওগাঁর জেলা জজ পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অন্তর্ভুক্ত করে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়।

নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র‍্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক তদন্ত চেয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ সেদিন রুলসহ এ আদেশ দেন। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে ওই ঘটনায় অংশ নেওয়া র‍্যাব কর্মকর্তাদের তদন্তকালে র‍্যাবের প্রধান কার্যালয়ে বদলি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাঁকে আটক করে র‍্যাব। ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। র‍্যাবের ভাষ্য, প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আরও পড়ুন

স্বজনদের অভিযোগ, আটক হওয়ার আগে সুলতানা জেসমিন সুস্থ ছিলেন। র‍্যাবের হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

‘উইমেন ডাইস ইন র‍্যাব কাস্টডি’ শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টারে গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের এই বেঞ্চে তুলে ধরেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত (পোস্টমর্টেম) প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য দেখতে চান।

রাষ্ট্রপক্ষকে ২৮ মার্চ এসব কাগজপত্র ও তথ্য দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি পত্রিকার খবর আদালতের নজরে আনা আইনজীবীকে লিখিত আবেদন প্রস্তুত করে নিয়ে আসতে বলা হয়। এ অবস্থায় মনোজ কুমার ভৌমিক গত ২৮ মার্চ ওই রিটটি করেন।

আর্থিক প্রতারণার কোনো ফৌজদারি মামলার না থাকলেও মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে ২২ মার্চ ভুক্তভোগীকে (সুলতানা জেসমিন) তুলে নেওয়া এবং ২৪ মার্চ তাঁর মৃত্যুতে সংশ্লিষ্ট র‍্যাব কর্মকর্তাদের কার্যক্রম কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৪৪ অনুচ্ছেদ পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থতায় ও ভুক্তভোগীর মৃত্যুতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের প্রতি কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‍্যাবের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।