বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা উপন্যাস ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গ্রন্থপাঠ উৎসব শেষ হয়েছে। উপন্যাসটি ইউনেসকোর স্বীকৃতি লাভ করায় উদ্যাপনের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তিন বিভাগে অংশ নিয়ে যুক্ত হয়েছিল পাঠচক্রে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তিন বিভাগের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে পাঠ উদ্যাপনের সমাপনী উৎসবের উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।
২৭টি পাঠাগার অংশ নিয়েছিল ‘সুলতানার স্বপ্ন’ পাঠ করার উদ্যোগে। গতকাল দিনব্যাপী আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে পাঠ উদ্যাপনে অংশগ্রহণকারী গ্রন্থাগারগুলো। বিকেলে পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শনিবার পর্যন্ত সমাপনী উৎসব চলবে। প্রতিদিন বিকেল চারটায় জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক একটা সমাজ হবে। তরুণেরা যুক্তি দিয়ে চারপাশকে যেন ব্যাখ্যা করতে পারে। জ্ঞানের বিস্তৃতির ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রাখে বটে, তবে অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে দেশের নানা প্রান্তের পাঠাগারগুলো। সুলতানার স্বপ্ন নিয়ে পাঠ এই পর্যায়ে পৌঁছাত না দেশের পাঠাগারগুলো যুক্ত না হলে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ইউনেসকো প্রতিনিধি ও অফিসপ্রধান সুজান ভাইজ বলেন, পাঠাভ্যাস মানুষের পরিধি বিস্তৃত করার সঙ্গে সমাজ ও মানুষকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে। মানুষের মধ্যে অসংখ্য পৃথিবী তৈরি করে দেয় পাঠাভ্যাস।
সুজান ভাইজ আরও বলেন, রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’কে সামনে নিয়ে আসতে পাঠচক্র ও বিভিন্ন পাঠাগারের সম্পৃক্ততা এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগ সম্পর্কে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ২৭টি পাঠাগার অংশ নিয়েছিল ‘সুলতানার স্বপ্ন’ পাঠ করার উদ্যোগে। এই আয়োজন সবাইকে ঋদ্ধ করেছে। পাঠ কর্মসূচির সমাপনী হচ্ছে এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে। তবে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ ছড়িয়ে যাবে আরও বহুদূর পর্যন্ত।
এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশের প্রথম নারী নিশাত মজুমদার সম্প্রতি হিমালয় জয় করে আসা পাঁচ নারীর অভিজ্ঞতা ও পরিচিতি তুলে ধরেন। তিনি এই অভিযানের সঙ্গে সুলতানার স্বপ্ন যোগ করার কারণ হিসেবে বলেন, শত বছর আগে রোকেয়া সাখাওয়াত এমন সময় সুলতানার স্বপ্ন লিখেছেন, যা ছিল কল্পনাতীত। একইভাবে এই বাংলাদেশের পঞ্চকন্যার পর্বতারোহণ ছিল সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ।
দেশের বেসরকারি পাঠাগারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের বক্তব্যে উঠে আসে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ উদ্যোগ ঘর নামে সৃজনশীল শিক্ষাচর্চার প্রস্তাব।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘বিশ্বস্মৃতি’ (ওয়ার্ল্ড মেমোরি) তালিকায় গত বছরের মে মাসে স্থান পেয়েছে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা নারীর মুক্তিপ্রত্যাশী উপন্যাস সুলতানা’স ড্রিম বা ‘সুলতানার স্বপ্ন’। এর মধ্য দিয়ে বাংলা অঞ্চলে নারীমুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ঐতিহ্যগত উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রস্তাবে ইউনেসকোর এ স্বীকৃতি পায় উপন্যাসটি। শত বছর আগে লেখা সুলতানা’স ড্রিম বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে ধ্রুপদি নারীবাদী কল্পকাহিনির অংশ।