প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোকে সমস্যা নয়, সম্ভাবনা হিসেবে দেখতে হবে: রিজওয়ানা হাসান
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর ও সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোকে দশকের পর দশক ধরে ভূরাজনৈতিক কারণে সংঘাতময় অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু এই অঞ্চলগুলোকে সমস্যা হিসেবে না দেখে সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় এ ধরনের অঞ্চলের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা ও সম্পদকে সংরক্ষণ করা হয়।
আজ সোমবার রাজধানীর শাহবাগে একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) এবং ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশের (এফআইভিডিবি) উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন। ইউএসএইডের ‘হোস্ট অ্যান্ড ইমপ্যাক্টেড কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যাকটিভিটি’ নামের পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান করা হয়। এফআইভিডিবির নেতৃত্বে প্রকল্পটি পরিচালিত হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ এলে সাধারণত উপকূলের অঞ্চলের কথাই আসে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম আলোচনায় আসে না। সরকারি তথ্য বিবেচনা করলে তিন পার্বত্য অঞ্চলের অনেক মানুষ এখনো সরকারি পানি সরবরাহের সুযোগ থেকে বঞ্চিত।’ তিনি আশা করেন, ইউএসএইডের প্রকল্পগুলোতে পানি সরবরাহের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
কক্সবাজারে পানিতে অন্য সমস্যা রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সেখানে পানিতে ভারী ধাতু পাওয়া গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এই সমস্যা নিয়েও ইউএসএইড কাজ কবরে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের স্থানীয় পণ্য ও খাবারের চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আশা করব ইউএসএইডের প্রকল্প তাদের বাজার বড় করতে সহযোগিতা করবে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্বর্তী চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, গত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একটি চমৎকার ফলপ্রসূ অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছে। এ দেশের মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে একসঙ্গে কাজ করেছে। এই অংশীদারত্বে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এখন পর্যন্ত ৭৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
ইউএসএইডের প্রকল্প বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, প্রকল্পে স্থানীয়ভাবে সবচেয়ে বড় অর্থায়ন রয়েছে। যে অঞ্চলের জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেখানকার মানুষের মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় মানুষ একসঙ্গে কাজ করা হবে।
হোস্ট অ্যান্ড ইমপ্যাক্টেড কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যাকটিভিটি প্রকল্পের প্রধান ও ইউএসএইডের চিফ অব পার্টি ট্রিনা বিশপ এক উপস্থাপনায় প্রকল্প সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ, খাদ্যনিরাপত্তা, দারিদ্র্য এবং কৃষি উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে, সামাজিকভাবে এবং পরিবেশগতভাবেও চাপ সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে।’
ট্রিনা বিশপ জানান, হোস্ট অ্যান্ড ইমপ্যাক্টেড কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যাকটিভিটি শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের তহবিল ৭০ মিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্পে উল্লিখিত সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করবে। চাকরির দক্ষতা প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক সুযোগ, নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন এবং স্যানিটেশন–ব্যবস্থায় নিয়ে কাজ করবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করবে।
ইউএসএইডের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ডেভওয়ার্কস ইন্টারন্যাশনাল, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল, ক্রিশ্চিয়ান এইড, ইন্টারন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ ফর ইমপ্যাক্ট ইভালুয়েশন এবং নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে স্থানীয় সংস্থাগুলোও কাজ করবে।