দেশেই ক্যানসার–চিকিৎসাবিষয়ক আলোচনা
কোলোরেক্টাল ক্যানসার: সময়মতো স্ক্রিনিংয়ে বাঁচতে পারে জীবন
যে কয়েকটি ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব, সেগুলোর মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসার অন্যতম। তবে সময়মতো স্ক্রিনিংয়ে বাঁচতে পারে জীবন।
ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এসকেএফ অনকোলজির আয়োজনে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার–চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও মেডিকেল অনকোলজিস্ট ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি গত রোববার (২৩ মার্চ) সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
আলোচনার শুরুতেই উপস্থাপক নাসিহা তাহসিন জানতে চান, বাংলাদেশে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের পরিসংখ্যান সম্পর্কে। উত্তরে ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্লোবোক্যানের তথ্যমতে, বাংলাদেশে কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭২৩। নতুন রোগীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এই রোগে ভুগছেন।’
কোলোরেক্টাল ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যানসারের ঝুঁকি বা রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়—পরিবর্তনযোগ্য ও অপরিবর্তনযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টর। অপরিবর্তনযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে রয়েছে বয়স, জেনেটিক মিউটেশন, পরিবারের কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ইতিহাস আছে কি না ইত্যাদি। আর পরিবর্তনযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, দেহের ওজন ইত্যাদি। বিশেষভাবে যাঁদের ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে কিংবা তামাক গ্রহণ করেন, তাঁদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি। টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খেলে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ও নিয়মিত ব্যায়াম করলে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। কিন্তু অপরিবর্তনযোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার আসলে উপায় নেই। যদি কারও পরিবারে এমন ইতিহাস থাকে, তবে অন্য সদস্যদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।’
কোলোরেক্টাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, যে কয়েকটি ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব, তাদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসার অন্যতম। ৪৫ বছর বয়স থেকেই এর স্ক্রিনিং শুরু করে দেওয়া উচিত। প্রতিবছর অন্তর স্ক্রিনিং করতে হবে।
যাঁদের পরিবারে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের আগে থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করে দেওয়া উচিত কি না? উপস্থাপকের এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সাধারণত পরিবারে কারও কোলোরেক্টাল ক্যানসার হয়ে থাকলে তাঁর যে বয়সে ক্যানসার হয়েছে, সেই বয়সেরও ১০ বছর আগে থেকে স্ক্রিনিং শুরু করে দেওয়া উচিত।
বলা হয়, প্রথম দিকেই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে নিরাময়ের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো রোগই যত দ্রুত শনাক্তকরণ সম্ভব, তত দ্রুত নিরাময় সম্ভব। ক্যানসারকে বলা হয় দুরারোগ্য ব্যাধি। তবে ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগটি শনাক্ত হয় একেবারে শেষের দিকে, যখন রোগটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে যায়। তবে প্রথম দিকেই এটি শনাক্ত করা গেলে সম্পূর্ণভাবে এর নিরাময় সম্ভব।’
কোলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এ ছাড়া মলের রং কালো হয়ে যাওয়া, মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া বা রেকটামে ব্যথা দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় পেটে চাকার মতো হয়ে যেতে পারে। খাদ্যনালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ওজন কমে যেতে পারে, অরুচি কিংবা দ্রুত ক্লান্তি ভাবও দেখা দিতে পারে।
কোলোরেক্টাল ক্যানসার ছোঁয়াচে কি না? উপস্থাপক জানতে চাইলে ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কোলোরেক্টাল ক্যানসার ছোঁয়াচে নয়, তবে বংশগত।’ চিকিৎসার পর রোগটি আবার ফিরে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি নির্ভর করে বয়স, জিনগত কারণ, টিউমারের ধরন ও চিকিৎসার সময় রোগীর প্রতিক্রিয়ার ওপর। প্রথম দুই বছরে এটি ফিরে আসার আশঙ্কা বেশি থাকে।
অনুষ্ঠানে একটি ক্যানসারের চিকিৎসা নিতে গিয়ে অন্য ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও আলোচনা হয়। ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম জানান, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নতুন ক্যানসার হতে পারে, তবে এতে ১০ থেকে ২০ বছর সময় লাগে।
কোলোরেক্টাল ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা ও প্রাথমিক পর্যায়ে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সহজ করা সম্ভব। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।