চার মাস কাজ করার পর আপনার নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
কামাল আহমেদ: একটি কাজ শেষ হলো। কিন্তু কাজটি পরিপূর্ণতা পাবে, যদি সরকার এটি বাস্তবায়ন করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার এককভাবে পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে আমরা মনে করি না। কারণ, কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি সময়ের প্রয়োজন। সুতরাং বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপরও নির্ভর করবে। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকার—সবাই এই সুপারিশমালা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচিত সরকারের ওপর আশাবাদ ব্যক্তি করি এ কারণে যে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ঘোষিত নিজস্ব সংস্কার কর্মসূচিতেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা অঙ্গীকার করেছে।
সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কী ধরনের বাধা আছে বলে মনে করেন, এক, দুই, তিন করে কি বলা যাবে?
কামাল আহমেদ: বাধা তো অবশ্যই আছে। যেমন সংবাদপত্রের মালিকেরা এসব সংস্কারের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন করবেন, আন্তরিকতার সঙ্গে করবেন, সেটি একটা প্রশ্ন। যদিও এই কমিশনে তাঁদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। কমিশনের সুপারিশগুলোর একটি বাদে সব কটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। যে একটির কথা বলেছি, সেখানেও ভিন্নমত নেই। আরেকটি বিকল্প প্রস্তাব এসেছে। সেটি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) নিয়ে। এ ছাড়া আর কোনো বিষয় নিয়ে কোনো দ্বিমত ছিল না। যেহেতু এই কমিশনে সংবাদপত্রের মালিকদের প্রতিনিধি, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকদের সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। সুতরাং আশা করা যায়, তাঁরা এই সংস্কারের অংশ হবেন এবং বাস্তবায়নের সহযোগী হবেন এবং বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেন।
বাধা তো অবশ্যই আছে। যেমন সংবাদপত্রের মালিকেরা এসব সংস্কারের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন করবেন, আন্তরিকতার সঙ্গে করবেন, সেটি একটা প্রশ্ন। যদিও এই কমিশনে তাঁদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কাজটি করেছেন। আপনাদের কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে চাই?
কামাল আহমেদ: আমাদের কাজের পরিধি, ব্যাপ্তি এবং কীভাবে কাজ করব, সে সম্পর্কে কমিশনের প্রথম সভাতেই সিদ্ধান্ত হয়, যা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছিলাম, অংশীজনদের মতামতের ওপর গুরুত্ব দেব। কারণ, এই সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবেন অংশীজনেরাই। আর সবচেয়ে বড় অংশীজন হলেন এ দেশের সাধারণ মানুষ, যাঁরা পাঠক, দর্শক-শ্রোতা। তাঁরা কী চান, গণমাধ্যম সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যায়ন কী, সেটি জেনে তাঁদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে। সে জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে জাতীয় জনমত সমীক্ষা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৪৫ হাজার মানুষের মতামত পাওয়া গেছে। পাশাপাশি অংশীজনদের নিয়ে ৫৪টি মতবিনিময় সভা করেছি, যাতে ১ হাজার ৪০০ জনের মতো অংশীজনদের প্রতিনিধি অংশ নেন। অনলাইন ও অফলাইনেও অনেকে মতামত দিয়েছেন। সুতরাং সবার মতামতের প্রতিফলন এখানে আছে।
আপনাদের দৃষ্টিতে মোটা দাগে গণমাধ্যমের সমস্যা কী কী?
কামাল আহমেদ: গণমাধ্যমের সমস্যা এখন অনেকগুলো। একটি বড় সমস্যা, জনস্বার্থে সাংবাদিকতা (পাবলিক ইন্টারেস্ট জার্নালিজম) এখানে হচ্ছে না। আমরা জনমত জরিপে দেখেছি, মানুষ মনে করে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিস্বার্থ—এগুলো সংবাদ ও গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করছে। এই যে স্বার্থের কথা আসছে, এটি আসছে মালিকদের কারণে। মালিকানার ধরন অনেকটা অস্বচ্ছ। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে এটা কম হলেও টেলিভিশন, অনলাইন, রেডিওর ক্ষেত্রে তা বেশি। স্বচ্ছ নীতিমালার অধীনে এগুলো হয়নি। লাইসেন্স প্রক্রিয়া উন্মুক্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ ছিল না। এগুলো রাজনৈতিক যোগসাজশ, ব্যবসায়িক পরিচিতি অথবা অন্য কোনো কারণে হয়েছে। ফলে তাঁরা নিজেদের গোষ্ঠী ও ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে বেশি চিন্তিত এবং সেগুলোরই প্রতিফলন দেখা যায়। ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর মাধ্যমে অপসাংবাদিকতাও হয়। এগুলো অতীতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
আপনারা প্রায় ১৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়েছেন, সেখানে অনেক সুপারিশ আছে। তার মধ্যে আপনার দৃষ্টিতে কোন সুপারিশগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।
কামাল আহমেদ: গণমাধ্যমের জন্য একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা দরকার। কারণ, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য প্রাণবন্ত গণমাধ্যম প্রয়োজন। সেই গণমাধ্যম সব পক্ষের মতামত যথাযথভাবে তুলে ধরবে। জাতীয় ইস্যুতে নিরপেক্ষভাবে একটি বিতর্কের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেবে এবং সেখানে যেন সব পক্ষের মতামত উঠে আসে। আর বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরি হবে, খবরের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাত থাকবে না। আবার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেলও দরকার। যে প্রতিষ্ঠান লাভ করে না, বছরের পর বছর লোকসান করে চলে, সেগুলো চালু রাখার উদ্দেশ্য কী? যদি অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা এনে ভর্তুকি দিয়ে কোনো গণমাধ্যম চালানো হয়, তাহলে তো ওই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থই সেখানে সংরক্ষিত হবে। ফলে ওই গণমাধ্যমের যথাযথ ভূমিকা দেখা যাবে না।
যে কেউ একটি নিউজ অনলাইন পোর্টাল খুলছে এবং সেটিকে গণমাধ্যম দাবি করছে। অনেকের সাংবাদিকতার যোগ্যতা দূরের কথা, সাধারণ অন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এভাবে ঠিকাদার কিংবা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অনেকেই সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছেন।
আপনারা সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক এবং শুরুর পদের বেতন বিসিএসে চাকরির শুরুর পদ নবম গ্রেডের সমান করার সুপারিশ করেছেন। এটি কি আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন সম্ভব?
কামাল আহমেদ: অসম্ভব কিছু না। এটি কিন্তু ১৯৮৪ সালের প্রথম প্রেস কমিশনের প্রতিবেদনেও পাবেন। তাতে সাংবাদিকতার শুরুর পদের বেতন তখনকার প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন স্কেলের চেয়ে বেশি ছিল। আর শিক্ষাগত যোগ্যতার যে প্রশ্ন উঠেছে, সেই প্রশ্নটি সারা দেশ থেকে উঠেছে। আমরা যত জায়গায় কথা বলেছি, সব জায়গা থেকে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। কারণ, যে কেউ একটি নিউজ অনলাইন পোর্টাল খুলছে এবং সেটিকে গণমাধ্যম দাবি করছে। অনেকের সাংবাদিকতার যোগ্যতা দূরের কথা, সাধারণ অন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এভাবে ঠিকাদার কিংবা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অনেকেই সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছেন।
‘ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়া’ নীতি বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। এটি নিয়ে কিন্তু কারও কারও মনে বিভ্রান্তিও আছে। বিষয়টি যদি আরেকটু স্পষ্ট করেন।
কামাল আহমেদ: এখানে এই মিডিয়ার কথা হচ্ছে মাধ্যম। অর্থাৎ সংবাদপত্র একটি মাধ্যম, টিভি একটি মাধ্যম, রেডিও একটি মাধ্যম, অনলাইন আরেকটি মাধ্যম। ‘ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়া’ এটির কথা হচ্ছে, একটি প্রতিষ্ঠানের একটি মাধ্যমই থাকবে। সেখানে দুটি মাধ্যমের মালিক হওয়া যাবে না। আপনি যদি টেলিভিশনের মালিক হন, তাহলে সংবাদপত্র করতে পারবেন না। আবার সংবাদপত্রের মালিক হলে টিভির মালিক হতে পারবেন না। এটি নতুন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা কিন্তু না। এই নীতি বিশ্বের অনেক দেশেই আছে।
বিটিভি, বেতার ও বাসসকে একীভূত করার কথা বলেছেন। তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক জনবলের কী হবে?
কামাল আহমেদ: সে কথাও কমিশনের সুপারিশমালায় বলা হয়েছে। আমরা বলেছি, বিটিভি ও বেতারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। তাঁরা যদি নতুন একীভূত সংস্থায় (‘বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা বা জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা’ নামকরণের প্রস্তাব) থাকতে চান, তাহলে তাঁদের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত। আর যদি তাঁরা প্রস্তাবিত একীভূত সংস্থায় চাকরি করতে না চান, তাহলে সরকার তাঁদের অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ করবে। তৃতীয় আরেকটি প্রস্তাব হলো, তাঁরা যদি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ নিতে চান, তাহলে সরকার তাঁদের সব পাওনা মিটিয়ে চাকরির অবসান ঘটাবে।
কমবেশি সব সরকারের সময়ই গণমাধ্যমকে একধরনের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকে। এখান থেকে বের হওয়ার উপায় কী।
কামাল আহমেদ: সরকারের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকবে। আবার বেসরকারি পর্যায় থেকেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আছে। এখন তো সবচেয়ে বড় ভয় নাকি বেসরকারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। ‘মবের’ কথা বলা হয়। এ কারণে গণমাধ্যমের অনেকে মানসিকভাবেও আতঙ্কিত বা ভয়ের মধ্যে আছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বর্তমান সরকার সরাসরি কোনো গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ করেছে, এমন কথা শুনিনি। এখন ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ যদি মানসিক ভীতি থেকে তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সাহস গণমাধ্যমকে অর্জন করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে।
আপনারা সাংবাদিকতা সুরক্ষায় আলাদা করে আইন করার সুপারিশ করেছেন। একই সঙ্গে অধ্যাদেশের একটি খসড়াও করে দিয়েছেন। কেমন হতে পারে সেই আইন?
কামাল আহমেদ: খসড়ার মূল বিষয় হলো সাংবাদিকতা পেশার কাজে বাধা তৈরি করে এমন কোনো হামলা, হুমকি, হয়রানি—এগুলো যদি আসে, তাহলে সেখানে ওই সাংবাদিকের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। শুধু সরকারের পক্ষ থেকে হবে এমন না, বেসরকারি সূত্র, এজেন্সি এমনকি মালিকপক্ষের ক্ষেত্রেও দেখা যায় তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো একজন রিপোর্টার প্রতিবেদন করে ফেলেছেন, তখন ওই রিপোর্টারের ওপর নানা হুমকি, হয়রানির ঘটনা ঘটে। এ ধরনের ঘটনা নিবৃত্ত করার বিধানও খসড়ায় আছে। প্রস্তাবিত খসড়া যদি সরকার গ্রহণ করে এবং অধ্যাদেশ আকারে জারি করে, তাহলে সাংবাদিকেরা পেশার জন্য সুরক্ষা পাবেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, সেটির জন্য সুরক্ষার দাবি করা যাবে না।
এখন তো সংবাদপত্রশিল্প নানা সংকট অতিক্রম করছে। এর মধ্যে উচ্চহারের করপোরেট করসহ নানা ধরনের করারোপ করা হচ্ছে। তা থেকে উত্তরণের বিষয়ে যদি বলতেন।
কামাল আহমেদ: আমাদের সুপারিশমালায় গণমাধ্যমের আর্থিক দিক সম্পর্কে কতগুলো প্রস্তাব করেছি, যা তাঁরা (সংবাদপত্রের মালিক) নিজেরাও কখনো চিন্তা করেননি, আমি এটি জোরের সঙ্গে বলতে পারি। যেমন আমরা বলেছি, অগ্রিম কর বন্ধ করা। এটি একটি অন্যায়-অযৌক্তিক কর। আমরা বলেছি, করপোরেট কর প্রত্যাহার করা হোক। কারণ, আমরা নথি যাচাই করে দেখেছি, যে সংবাদপত্র করপোরেট কর দেওয়ার আগে লাভ করেছে, সেই সংবাদপত্র কর দেওয়ার পর লোকসানে চলে গেছে। এভাবে আর কয়েক বছর চললে সেই প্রতিষ্ঠান টিকবে না। এ কারণে আমরা এ ধরনের কর থেকে সংবাদপত্রকে ছাড় দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছি। আমরা নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করার কথা বলেছি। টেলিভিশনে যেসব সরকারি ঘোষণা বিনা পয়সায় দেওয়া হয়, সেখানে আমরা বলেছি, সে জন্য পয়সা দিতে হবে। সরকারি বিজ্ঞাপন টিভি ও রেডিওতেও দিতে বলেছি। বিজ্ঞাপনের হার বাড়াতে বলেছি। শুধু তা-ই নয়, বেসরকারি বিজ্ঞাপনের হারের কাছাকাছি করে সামঞ্জস্য রাখা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি, এগুলো যদি সরকার দেয়, তাহলে বেতন-ভাতা দেওয়ার প্রশ্নে অসংগতির প্রশ্ন থাকবে না।
বর্তমানে ১ হাজার ৩০০-এর বেশি দৈনিক পত্রিকা আছে। এ ছাড়া নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত অসংখ্য অনলাইন আছে। আইপি টিভি আছে। আবার পত্রিকার প্রচারসংখ্যা বাড়িয়ে দেখার প্রবণতাও আছে। টিভির টিআরপি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে। এই যে এত এত গণমাধ্যম, আসলে তার বাজার কি বাংলাদেশে আছে?
কামাল আহমেদ: এত গণমাধ্যমের দরকারের বিষয়টি নির্ধারণ করবে কে? সেটি নির্ধারণ করবেন দর্শক, পাঠক, শ্রোতা। পাঠক যে কাগজ চান, সেটি কিন্তু তিনি পয়সা দিয়ে কিনে পড়েন। টিভির জন্য কেব্ল অপারেটরকে পয়সা দেন। এই যে ১৩ শর মতো পত্রিকার কথা বললেন, তার মধ্যে বিক্রি হয় অর্থাৎ পয়সা দিয়ে মানুষ কেনেন এমন পত্রিকা আছে সর্বোচ্চ ৫২টি। বাকি কাগজগুলো কী জন্য প্রকাশ পায়, সরকারি বিজ্ঞাপনের জন্য। সরকারি কোটায় নিউজপ্রিন্ট আমদানির সুবিধা পাওয়ার জন্য। সেগুলো থেকে লাভবান হন কিছু ব্যক্তি। এসব অনিয়ম বন্ধ হওয়া দরকার।
এখানে কি সরকারের কোনো দায় নেই। কারণ, প্রচারসংখ্যা তো ঠিক হয় সরকারি প্রতিষ্ঠান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) মাধ্যমে।
কামাল আহমেদ: এই হিসাবে ঢাকা শহর থেকে যতগুলো পত্রিকা ছাপা হয়, তার প্রচারসংখ্যা হওয়ার কথা ১ কোটি ৫১ লাখের মতো। আর সারা দেশে তা হবে ১ কোটি ৮১ লাখের মতো। এখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায় অবশ্যই আছে। কিন্তু সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষেরও দায় আছে। কারণ, প্রচারসংখ্যার ঘোষণা দেয় তারাই। আবার এই ঘোষণার পর যাচাই প্রক্রিয়ায় আরও অনেকে যুক্ত আছেন।
আপনাকে ধন্যবাদ।
কামাল আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।