প্রোস্টেট ক্যানসার ছোঁয়াচে রোগ নয়। বেশির ভাগ সময়ই এই রোগের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যদিও অনেক ক্ষেত্রে মূত্রত্যাগে অসুবিধা ও মূত্রের সঙ্গে রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে। যার কারণে প্রোস্টেট ক্যানসারকে পুরুষদের জন্য নীরব ঘাতক বলা হয়।
ইউরো–অনকোলজির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সিইও এবং ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ সালাম এ কথাগুলো বলেন। ‘বিশ্বমানের ক্যানসার–চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন তিনি। আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে এসকেএফ অনকোলজি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এখনো প্রোস্টেট ক্যানসার নিয়ে রয়েছে নানা ভ্রান্ত ধারণা এবং সচেতনতার অভাব, তাই এই পর্বে প্রোস্টেট ক্যানসার নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন অধ্যাপক এম এ সালাম। পর্বটি গত শুক্রবার (২১ মার্চ) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
শুরুতেই উপস্থাপক জানতে চান বাংলাদেশে প্রোস্টেট ক্যানসারের পরিসংখ্যান সম্পর্কে। উত্তরে অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, ‘আমাদের দেশে সঠিক পরিসংখ্যানের জন্য যে এপিডেমিওলজিক্যাল স্টাডি দরকার, সেটি বাংলাদেশে এখনো করা হয়নি। কারণ, এই স্টাডিটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে এটি নিয়ে আমরা কিছুটা হলেও ধারণা পেতে পারি। যেমন দুই থেকে তিন বছর আগে ভারতের মুম্বাই, দিল্লি ও কলকাতায় একটি পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। এতে দেখা যায়, আমরা প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি যত কম মনে করছি, এর ঝুঁকি ঠিক ততটা কম নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দেশেও এর পরিসংখ্যানটি বের করে আনা দরকার।’
প্রোস্টেট ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা এখন খুব নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ করেছেন যে প্রোস্টেট ক্যানসার আসলে জেনেটিক ড্যামেজের কারণেই হয়ে থাকে। জেনেটিক ড্যামেজ যত বেশি হবে, প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি তত বাড়বে। বিভিন্ন কারণে জেনেটিক ড্যামেজ হয়ে থাকে। আমাদের দেশের প্রতিকূল আবহাওয়া এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। যদি ক্রোমোজোমের একটি স্ট্যান্ড ভেঙে যায়, তাহলে লো–রিস্ক প্রোস্টেট ক্যানসার হতে পারে। যদি ক্রোমোজোমের দুটি স্ট্যান্ড ভেঙে যায়, তাহলে হাই–রিস্ক প্রোস্টেট ক্যানসার হতে পারে। আর এই হাই–রিস্ক প্রোস্টেট ক্যানসার মারাত্মক ভয়াবহ। আগে ধারণা করা হতো খাবারদাবার, ধুলাবালু কিংবা তামাকের সঙ্গে এই ক্যানসারের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এগুলোর সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসারের কোনো সম্পর্ক নেই।’
পরিবারে কারও প্রোস্টেট ক্যানসার থাকলে কি অন্য সদস্যেরও এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, ‘যাঁদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের ঝুঁকি অবশ্যই অনেক বেশি। তাই তাঁদের ৪০ বছর বয়স থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করে দেওয়া উচিত এবং প্রতি এক বছর অন্তর অন্তর তাঁদের স্ক্রিনিং করানো উচিত।’
স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, শুধু প্রোস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো ক্যানসারের ক্ষেত্রেই স্ক্রিনিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যত দ্রুত এটি শনাক্ত করা যাবে, নিরাময়ের সম্ভাবনা তত বাড়বে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে এটি পুরোপুরিভাবে নিরাময় সম্ভব।
প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, বেশির ভাগ সময়ই আসলে এর কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যার কারণে প্রোস্টেট ক্যানসারকে পুরুষদের জন্য নীরব ঘাতক বলা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে মূত্রত্যাগে অসুবিধা ও মূত্রের সঙ্গে রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে।
অনেকের ধারণা প্রোস্টেট ক্যানসার ছোঁয়াচে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। প্রোস্টেট ক্যানসার কোনোভাবেই ছোঁয়াচে রোগ নয়।
প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের ভূমিকা ঠিক কেমন? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, যেকোনো ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের ভূমিকা অনেক বেশি। একজন রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, মেডিকেল অনকোলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ইমিউনোলজিস্ট ও রেডিওলজিস্ট একসঙ্গে একটি সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেটি বেশি কার্যকর হয়।