শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গণবিজ্ঞপ্তি দেবে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের বক্তব্য ও এখনো নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কেও জানতে চাইবে। পাশাপাশি গুমের নির্দেশ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কাজ করবে।
আজ রোববার বেলা ১১টায় রাজধানীর গুলশানে গুমের ঘটনায় গঠিত কমিশনের প্রথম সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশন গঠন করে। আজকের সভায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনকে গুলশান এভিনিউতে কার্যালয় দেওয়া হয়েছে। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিন সেখানে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কমিশনের কাজ চলবে।
কমিশন সূত্র জানায়, ২৭ আগস্ট কমিশন গঠন করা হলেও রোববার পর্যন্ত কার্যত তাদের কোনো কার্যক্রম ছিল না। রোববার তাদের বসার মতো একটি জায়গা হয়েছে। তবে এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করার মতো পর্যাপ্ত জনবল তারা পাননি। তবে স্বল্প পরিসরেই তারা কার্যক্রম শুরু করেছেন।
প্রথম বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রজ্ঞাপনে কমিশনকে তদন্তের ক্ষেত্রে যেসব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এর বাইরে আরও কিছু বিষয় প্রয়োজন বলে সভায় আলোচনা হয়। সেগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে, যেন আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিশনকে সেসব ক্ষমতা দেওয়া হয়।
গুমের ঘটনার সব পর্যায়ে সম্পৃক্তদের যতটা সম্ভব তুলে আননে কাজ করবে কমিশন। এ ক্ষেত্রে কোন পর্যায় থেকে কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, সেগুলো ঠিক করা হবে। গুমের ঘটনাগুলো নিয়ে অন্য যেসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তাঁদের থেকে তথ্য সংগ্রহের বিষয়েও আলোচনা করেছে কমিশন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, কমিশন ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো সংস্থা দ্বারা যাঁরা গুমের শিকার হয়েছেন, তাঁদের সন্ধানে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি সংস্থার নাম উল্লেখ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেগুলো হলো বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও কোস্ট গার্ড।
কমিশন সূত্র বলছে, গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের কাছে বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক বক্তব্য এলেও কমিশন ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের থেকে সরাসরি অথবা লিখিত বক্তব্য শুনতে চায়।