চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ১৪৭ শিক্ষকের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৭ শিক্ষক। আজ শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানান তাঁরা। বিবৃতিতে শিক্ষকেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (চাকসু) সক্রিয়করণ ও কার্যকর সিনেট বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে শিক্ষকেরা উল্লেখ করেন, বিগত দশকগুলোতে দলীয় ছাত্ররাজনীতি হয়ে পড়েছে খুন, দখল, চাঁদাবাজি, নির্যাতন আর ভয়ের প্রতীক। এই রাজনীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা মেধার ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দ পাচ্ছেন না। দিনের পর দিন ব্যাহত হয়েছে একাডেমিক কার্যক্রম। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা হয়েছেন নৃশংসতা আর জিম্মিকরণের শিকার।

দলীয় রাজনীতির কারণে বিভিন্ন অপকর্মের কথা উল্লেখ করে শিক্ষকেরা বলেন, দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও নেত্রীর লেজুড় হিসেবে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী-শিক্ষক নিপীড়নসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে তাঁরা জড়িত থাকেননি। বিগত দশকগুলোর চিত্র স্পষ্ট করেছে, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দাপটে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক কোনো কর্মকাণ্ডই পরিচালনা করতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে ছাত্ররাজনীতি তথা শিক্ষার্থীদের বারবার ব্যবহার করেছে। কিন্তু কোনো একটি দলও ক্ষমতা লাভের পর শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণে মনোযোগী হয়নি। আজ পর্যন্ত দেশের সেরা বিদ্যাপীঠগুলোতে শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম মানসম্পন্ন আবাসিক সুবিধা পাননি। স্বাধীনতার এত বছর পরও কোনো সরকার পর্যাপ্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ করেনি। হলের ডাইনিং-ক্যানটিন তথা ক্যাম্পাসে ন্যূনতম মানের খাবারের নিশ্চয়তা তৈরিতেও সরকারগুলো উদ্যোগী হয়নি।

লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষকেরা বলেন, শিক্ষার্থীদের আবাসন ও খাবারের দিকে নজর না থাকলেও দেশে ব্যয়বহুল নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধিত হয়েছে ও হচ্ছে। বাধাহীনভাবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বাড়ছে, ক্রমেই বেড়ে চলেছে উচ্চশিক্ষায় ব্যক্তিগত ব্যয়। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজনীতি অনুসরণ করে তারই আদলে পরিচালিত দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে। তাই শিক্ষকেরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক।

চাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষকেরা বলেন, ‘ছাত্ররা তাঁদের অধিকারের কথা বলবে চাকসু প্রক্রিয়াকরণের ও কার্যকর সিনেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে। চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সেই সঙ্গে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে সিনেটে প্রতিনিধি প্রেরণ করার মাধ্যমে। এই ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জোরালো দাবি জানান তাঁরা।

বিবৃতি দিলেন যাঁরা

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খাদিজা মিতু, আলাউদ্দিন, সাংবাদিকতা বিভাগের আর রাজী ও সায়মা আলম; ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অলক পাল, প্রাণরসায়ন বিভাগের রেজওয়ানুল হক ও মোহাম্মদ মশাররফ হোসেন; জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের আদনান মান্নান, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লুলু ওয়াল মারজান, এস এম রফিকুল ইসলাম ও মাহবুব হাসান; প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের মনজুরুল কিবরিয়া, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ইকবাল আহমেদ, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শারমিন সুলতানা, নুরুদ্দিন মাহমুদ; হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আফতাব উদ্দিন, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সুমন ভট্টাচার্য, মৌরি দে; ফিন্যান্স বিভাগের অনুপম দাশ গুপ্ত, ফলিত রসায়ন বিভাগের দিদারুল আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম; অর্থনীতি বিভাগের মোহাম্মদ তারেকুল হাসান চৌধুরী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোহাম্মদ ফজলুল কাদের, আইন বিভাগের আসমা বিনতে শফিক, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনুপম কুমার দাশ, মার্কেটিং বিভাগের এইচ এম কামরুল হাসান, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তাসনিম মুশাররাত, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।