শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনেকের ফেসবুক প্রোফাইলে লাল ফ্রেম

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে এভাবে ফেসবুক প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম দিয়েছেন একজন সংস্কৃতিকর্মীছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙিয়েছেন অনেকে। এসব ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। অন্যদিকে সরকার–সমর্থকদের অনেকে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো রঙের ফ্রেম জুড়েছেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার সারা দেশে শোক পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর রাতে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির পক্ষে রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে আজ মুখ ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলার কর্মসূচি ঘোষণা করেন কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক।

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ফেসবুক প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম জুড়ে নানা প্রশ্ন করছেন অনেকে
ছবি: সংগৃহীত

এই কর্মসূচি ঘোষণার পর গতকাল রাত থেকেই ফেসবুকের প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম সাঁটাতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা তাঁদের ফেসবুক প্রোফাইলে লাল ফ্রেম সাঁটিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, কামরুল হাসান, সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী, কাজলী সেহরীন ইসলাম, সাইফুল আলম চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জামিল খান প্রমুখের ফেসবুক প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম দেখা গেছে।

লেখকদের মধ্যে জাকির তালুকদার, চঞ্চল আশরাফ, মাহবুব মোর্শেদ, সালাহউদ্দিন শুভ্রসহ অনেকেই রয়েছেন এই দলে।

শিক্ষকদের মধ্যে সাইফুল আলম চৌধুরী লিখেছেন, ‘এত মানুষের মৃত্যুর পরও কেন মানুষ কালোকে বেছে না নিয়ে লালকে বেছে নিল? আপনাদের ধ্বংসযজ্ঞ, ষড়যন্ত্র, তৃতীয় শক্তি, পানি ছিটানো, গুজব রোধ, নিরাপত্তা হেফাজত—এসব তত্ত্ব আর ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে এটা যে কত বড় শক্ত প্রতিবাদ, সেটা আপনাদের মতো বড় বড় ন্যারেটিভের জন্মদাতা ও প্রচারকের বোঝার ক্ষমতা নেই। কালো যেখানে শোকের প্রতীক, লাল সেখানে বিপ্লব আর ভালোবাসার রং। লাল শৌর্যবীর্য আর সাহসিকতার প্রতীক।’

আরও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীও ফেসবুক প্রোফাইলে লাল ফ্রেম জুড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ফেসবুক পেজে লাল ফ্রেম দেখা গেছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও তাঁদের প্রোফাইলে লাল ফ্রেম সাঁটিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় শোকের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ফেসবুক প্রোফাইল কালো রঙের ফ্রেম দিয়েছেন ছাত্রলীগের অনেক নেতা
ছবি: সংগৃহীত

অপর দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা রাষ্ট্রীয় শোক হিসেবে নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলে কালো ফ্রেম সাঁটিয়েছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, কেন্দ্রীয় নেতা বরিকুল ইসলাম, আবদুল আলীম খান, মুনেম শাহরিয়ার, রফিকুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলামসহ অনেকের প্রোফাইলেই কালো ফ্রেম দেখা গেছে।

ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘শিবির-ছাত্রদল, বিএনপি-জামায়াত সবাই দেখি আজ কমরেড হয়ে গেছে। তাদের ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) আজ লাল আর লাল। এমন কেন ওরা?’

শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হত্যাকাণ্ডের পর দেশব্যাপী আটক ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা। তাঁদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে–মুখে লাল কাপড় বেঁধে সংহতি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে তাঁরা মৌন মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরোনো ফজিলাতুন্নেসা হল–সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে পুনরায় মিছিল একই পথে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষে হয়। এরপর সেখানে সমাবেশ করেন তাঁরা।

কাছাকাছি সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে থেকে মাথায় ও মুখে লাল কাপড় বেঁধে শিক্ষকেরা শোভাযাত্রা বের করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এই শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়কে সমাবেশ করেন তাঁরা। এই কর্মসূচিতে প্রায় ২০০ শিক্ষক অংশ নেন।

এর বাইরে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন