বর্ণমেলায় রঙে-বর্ণে মাতোয়ারা শিশুরা
আরওয়া আজবাহ নার্সারিতে পড়ে। অ, আ, ই—বর্ণগুলো সে লিখতে শিখেছে মাত্র। একটি সাদা টি–শার্টে সে এই কটি বর্ণই রং-তুলি দিয়ে এঁকেছে। পাশেই ওর বাবা-মা দাঁড়িয়ে ছিলেন। আরওয়াকে তাঁরা বারবার বলছিলেন, ‘মা, হয়েছে?’ আরওয়া বলে, ‘আরও আঁকব।’
আরওয়ার মা শামিমা জাহান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ে কয়েকটি বর্ণ আঁকা শিখেছে। আর পতাকা আঁকা শিখেছে। সে সেগুলোই আঁকছে। ওর ভালো লাগছে আঁকতে, তাই থামতে চাইছে না।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় রাজধানীর ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মেরিল বেবি-প্রথম আলো ‘বর্ণমেলা’র অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। সেই বর্ণমেলার ‘বর্ণায়ন’ স্টলে এভাবে ছবি আঁকায় মত্ত ছিল আরওয়া।
বর্ণায়ন স্টলের সুমন চন্দ্র রায় বলেন, ছোটরা ১০০ টাকায়, বড়রা ১৫০ টাকায় একটি করে সাদা টি–শার্ট কিনতে পারে। এখান থেকে রং-তুলি দেওয়া হয়। তারা নিজেদের মতো করে বর্ণ বা যেকোনো কিছু আঁকতে পারে। পরে রং করা টি–শার্ট তারা নিয়ে যায়।
বর্ণমেলায় বর্ণায়নের মতো আরও অনেক আয়োজন থাকে, যেখানে শিশুরা নিজের ভাষা সম্পর্কে জানতে পারে, অংশগ্রহণ করতে পারে। আর এসব বর্ণখেলায় শিশুরা আনন্দের সঙ্গে সময় পার করে।
‘বর্ণলিখন’ আয়োজনে শিশুদের মধ্যে হাতের লেখার প্রতিযোগিতা হয়। এতে অংশ নেওয়া শিশুদের মধ্যে তিনটি ভাগে মোট নয়জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের হাতের লেখা মেলায় পরে প্রদর্শন করা হয়। সেই প্রদর্শনী দেখছিল আহমাদ মুজতবা। সুন্দর হাতের লেখা দেখে ওর মা ফারজানা কবির বলেন, ‘বাবা (আহমাদ), বড় হলে তোমার লেখাও এমন সুন্দর হবে।’
বর্ণমেলার এসব আয়োজন শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করছে বলে মূল্যায়ন করেন ফারজানা কবির।
বর্ণলিখনের পাশেই বর্ণাঙ্কন। সেখানে তিন বিভাগে অংশ নেওয়া সেরা ৯ আঁকিয়ের ছবি প্রদর্শন করা হয়। সেসব ছবিও দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখেন।
সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারের পাশে হয় বর্ণ প্রদর্শনী। সেখানে বিভিন্ন বর্ণ তৈরি করে রাখা হয়। যেমন ম এঁকে পাশে মৎস্যকন্যার ছবিও আঁকা হয়। এই বর্ণ প্রদর্শনী দেখে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া আদিবা নাওয়ার বলে, ‘আমাদের বর্ণগুলো অনেক সুন্দর। হয়তো প্রত্যেকের কাছেই তার ভাষার বর্ণ এমন সুন্দর।’
বর্ণমুখোশ কারুগঞ্জের স্টলে ২০০ টাকা করে সরা বিক্রি করা হয়। পরে তারা রং-তুলি সরবরাহ করে। যে যার মতো করে সরা এঁকে নিয়ে যায়। রাজধানীর মেরুল বাড্ডা থেকে আসা শামসুন নাহারের দুই বছর বয়সী ছেলে একটি সরায় রং করছিল। বারবার বলা সত্ত্বেও সে রং করে যাচ্ছিল। শামসুন নাহার বলেন, তাঁর ছেলে ভালো করে আঁকতেও পারে না। তবু সে আঁকবে। অনেকক্ষণ হলো সে আঁকছে। যেতে চাইছে না।
বর্ণালি বর্ণ স্টল থেকে নানা রং–পেনসিল সরবরাহ করা হয়। পাশেই ছিল সাদা কাপড়ের দেয়াল। সেখানে রং–পেনসিল দিয়ে শিশুরা আঁকছিল। মানচিত্র, বাঘ, দোয়েল, কাঁঠাল, শাপলা, লাটিম, বিড়াল, ছাতা, ঢেঁকি, দোতারা, পালকি, প্রজাপতিসহ নানা কিছু আঁকে শিশুরা।
প্রথম আলোর আয়োজনে এই বর্ণমেলায় সহযোগিতা করেছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড মেরিল বেবি। সহযোগিতায় ছিল সেপনিল, সুপারমম ও প্রচার সহযোগী এটিএন বাংলা।