স্লোগানে উত্তাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় একত্র হয়েছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। কোটা সংস্কারের দাবি ঘিরে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন সরকার পতনের স্লোগানে উত্তাল। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা আসছিলেন।
শহীদ মিনার এলাকায় উপস্থিত প্রথম আলোর তিনজন প্রতিবেদক জানান, আজ শনিবার বেলা আড়াইটার পর থেকে দলে দলে শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। সময় যত গড়াতে থাকে, আন্দোলনকারীদের সংখ্যা তত বাড়তে থাকে। হাজারো মানুষের ভিড়ে শহীদ মিনার চত্বর ও এর আশপাশের এলাকার পা ফেলার জায়গা নেই।
শহীদ মিনার এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত,’ ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে,’ ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো,’ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, অভ্যুত্থান’, ‘পদত্যাগ পদত্যাগ, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ এমন নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা’ দাবিতে গতকাল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা আজ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও কাল রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।
আজকের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে রওনা হন। বেলা তিনটার দিকে সায়েন্স ল্যাব থেকে কয়েক হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার এলাকায় উপস্থিত হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহত, গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদে ব্যান্ড সংগীতশিল্পীরা আজ বেলা তিনটায় ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে জড়ো হন। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে সংগীতশিল্পীরা শহীদ মিনারে রওনা দেন। মিছিল নিয়ে বিকেল পৌনে চারটার দিকে তাঁরা শহীদ মিনার এলাকায় পৌঁছান।
বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় হাজারো মানুষের মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে পুরো এলাকা। একদিকে জগন্নাথ হল, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার, আরেক দিকে দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে গেছে জনতার ঢল। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও লোকজন শহীদ মিনারের দিকে আসছেন।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের আজ সশরীর শহীদ মিনার এলাকায় আসার কথা রয়েছে। ২৬ জুলাই ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি জোর করে তুলে মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। নাহিদ ও আসিফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরদিন ২৭ জুলাই সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে সায়েন্স ল্যাব এলাকা থেকে জোর করে তুলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৮ জুলাই ভোররাতে বাসা ভেঙে জোর করে নুসরাত তাবাসসুমকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ছয়জন গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ডিবির হেফাজত থেকে ছাড়া পান। ছাড়া পেয়ে তাঁরা বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকাকালে গত ২৮ জুলাই রাতে এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলন প্রত্যাহারের যে ঘোষণা তাঁরা দিয়েছিলেন, সেটা স্বেচ্ছায় দেননি। তাঁরা বলেন, ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটক নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।