চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের বেসকুর খালাস চেয়েছেন তাঁর আইনজীবী। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ বুধবার বাবরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে এই আরজি জানানো হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আলোচিত ওই মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। সেদিন পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। পেপারবুক উপস্থাপন শেষে ৮ ও ৯ ডিসেম্বর যুক্তি উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের পর ৯ ডিসেম্বর আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে।
এর ধারাবাহিকতায় লুত্ফুজ্জামান বাবরের পক্ষে আজ যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান শুনানিতে ছিলেন।
শুনানির বিষয়ে পরে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর মূলত এ মামলার আসামি ছিলেন না। ২৮ জনের সাক্ষ্য হয়ে যাওয়ার পরে পুনরায় তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। পুনরায় তদন্ত হয়। ওই তদন্তের মাধ্যমে বাবরসহ ১১ জনকে নতুন করে আসামি করা হয়। এরপর ৫৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে বাবরকে বিচারিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এভাবে মামলা চলা অবস্থায় ২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা আইনানুযায়ী হয়নি, বেআইনিভাবে করা হয়েছে বলে শুনানিতে তিনি বলেছেন। বাবরের নামে কোনো সরাসরি সাক্ষ্য–প্রমাণ ও কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই।
বাবরের আইনজীবীর যুক্তি, তাঁরা (প্রসিকিউশন পক্ষ) বলেছে বাবরের নির্দেশে পাঁচজনকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সাক্ষ্য–প্রমাণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাঁদের কাউকে ছাড়া হয়নি। তাঁর (বাবর) বিরুদ্ধে অভিযোগ তখন তদন্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত করেছেন। এ ব্যাপারে তৎকালীন তদন্ত কমিটির সভাপতি (তৎকালীন সচিব) ও সদস্যসচিব—পরস্পর বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর (বাবর) বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো সাক্ষ্য–প্রমাণ নেই। তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলায় আসামি করা হয়। তাই তাঁকে যেন বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
পরে বিকেলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী প্রথম আলোকে বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করছেন। বৃহস্পতিবার শুনানি হবে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।