অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি

রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ঢাকা, ১৫ জানুয়ারিছবি: প্রথম আলো

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা চায়, এই বৈঠকে আলোচনা শেষে অবিলম্বে ঘোষণাপত্র জারির তারিখ ঘোষণা করা হোক। ঘোষণাপত্র নিয়ে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ ও গড়িমসি করা হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।

বুধবার রাতে সাংগঠনিক আলোচনা শেষে রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই হঁশিয়ারি দেওয়া হয়। লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ সপ্তাহ শেষে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির অবস্থান জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও দলিল সংরক্ষণের স্বার্থে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আমরা জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কারণ, এ ছাড়া এই অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক, আইনি ও আন্তর্জাতিক ভিত্তি ও সমর্থন আদায় করা কঠিন হবে। এমনকি বিদ্যমান সংবিধানের বিরুদ্ধে সংঘটিত এই গণ–অভ্যুত্থানের আইনি ভিত্তি দেওয়া আমাদের বিবেচনায় ছিল। পরে ৩০ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে তারা জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করবে। আমরা প্রাথমিকভাবে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি সমাবেশ করি। ওই সমাবেশ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারির আলটিমেটাম দেওয়া হয়।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গত ১৫ দিনে ঘোষণাপত্র ইস্যুতে সরকারের তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও শুরু করেনি। আমরা সরকারের এই অনীহা ও ধীরগতির তীব্র নিন্দা জানাই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘গণ–অভ্যুত্থানের বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক দাবির মুখে সরকার ঘোষণাপত্র জারির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাক্ষাৎ করতে যাবে। সেখানে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। আলোচনা শেষে অবিলম্বে ঘোষণাপত্র করার তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কোনো প্রকারের কালক্ষেপণ ও গড়িমসি ছাত্র-জনতা বরদাশত করবে না। কালক্ষেপণ হলে আমরা দ্রুতই সারা দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’

পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) বৈঠকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব ঘোষণাপত্র জারি করা উচিত।

রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, চব্বিশ-পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলবে না৷ যারা রক্ত ঝরিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে৷

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন