‘সূর্য হয়ে ওঠো, ইচ্ছেমতো ছোটো’ স্লোগানে আনন্দ–উল্লাসে মেতে দশম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করল কিশোর আলোর পাঠক–স্বেচ্ছাসেবকেরা। রোববার দেশের শিশু-কিশোরদের প্রধান জনপ্রিয় পত্রিকা কিশোর আলো পথচলার দশ বছর পূর্ণ করে একাদশ বর্ষে পদার্পণ করেছে।
জন্মদিন উদ্যাপন উপলক্ষে কিশোর আলোর পাঠক, স্বেচ্ছাসেবক, বুক ক্লাব, ফটোগ্রাফি ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে বিকেল চারটায় কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের ১০ম তলার সভাকক্ষে হলো এক আনন্দঘন অনুষ্ঠান। সংগীত ও অভিনয় তারকাদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা হলো। সঙ্গে আলোচনা, আবৃত্তি আর গান তো ছিলই। তবে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল কিশোর আলোর প্রয়াত বন্ধু, যে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গ দান করেছিল, সেই সারাহ ইসলামকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে কিশোর আলোর কার্যক্রম নিয়ে তিনটি ভিডিও দেখানো হয়। পাঠকেরা কেমন করে স্বেচ্ছাসেবক হবে, জানানো হয়ে সেই বিষয়ও।
কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক ও সহকারী সম্পাদক মহিতুল আলমের সঞ্চালনায় আনন্দ আয়োজনে অতিথি হয়ে এসেছিলেন সংগীতশিল্পী এরফান মৃধা। তিনি সমবেত শিশু-কিশোরদের অভিনন্দন জানিয়ে সবাইকে নিয়ে জনপ্রিয় ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি গেয়ে শোনান। অভিনয়শিল্পী তাসনিয়া ফারিণ সমবেত নবীনদের পাঠক্রমের বাইরের বই পড়া, নানা রকম সৃজনশীল কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রেরণা দেন। তিনি বলেন, শুধু পড়ালেখায় ভালো হলেই চলবে না, পরিপূর্ণ মানুষ হতে হবে। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য অবদান রাখতে পরামর্শ দেন তিনি।
শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে ছোটদের জন্য নিয়মিত একটি মানসম্পন্ন পত্রিকা প্রকাশ করা খুবই কঠিন কাজ। কিশোর আলোর ১০ বছর পূর্তি একটা বড় সাফল্য।’ তিনি তাদের অভিনন্দন জানিয়ে একটি ছড়া পাঠ করেন।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন কিশোর আলোর পাঠক ও স্বেচ্ছাসেবীদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তারা কিশোর আলো পড়তে পড়তে একসময় প্রথম আলোর পাঠক হয়ে উঠবে। এভাবেই আলোর পথ ধরে তাদের অনেক দূর অবধি যেতে হবে।
গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান কুইজ পরিচালনা করেন।
আনিসুল হক বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর গল্পের বই পড়তে হবে, লিখতে হবে, সংগঠন করতে হবে, ভালো মানুষ হতে হবে সে জন্য। কিশোর আলো পড়তে হবে।
শেষের দিকে সংগীতশিল্পী আরফিন রুমি ও পড়শী এসেছিলেন কিছু সময়ের জন্য। তাঁরাও অনুপ্রেরণা দিয়ে ‘লাল সবুজের বিজয় নিশান’ গানটি গেয়ে শোনান।
নিজের লেখা ‘দুঃখটাকে দিলাম ছুটি’ গানের খানিকটা গেয়ে শোনান গীতিকার প্রথম আলোর সাংস্কৃতিক আয়োজন বিভাগের প্রধান কবির বকুল। প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা সবাইকে নিয়ে গেয়ে শোনান, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে....’।
কিশোর আলোর পাঠক ও স্বেচ্ছাসেবকেরা গান ও আবৃত্তিতে অংশ নেয়। আবৃত্তি করে প্রীতি, আলিসা মারিয়াম জানায় কিশোর আলোর সঙ্গে যুক্ত থাকার আনন্দময় অভিজ্ঞতার কথা। কিশোর আলোর শুরুর দিকের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করে মোস্তাফিজুর রহমান। গান পরিবেশন করে আরাফাত মাধুর্য। জাফির হাসান প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে সঞ্চালকের ভূমিকাও পালন করে কিছুটা সময়। গান করে স্বেচ্ছাসেবক সাইয়ারা কবির ও আরিফিন ফয়সাল। আনুষ্ঠানিকতার পরে ছিল জন্মদিনের কেক ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন। তার সঙ্গে ছিল ফরিদুর রেজা সাগরের 'ছোটকাকু'র সৌজন্যে চকলেট ও সেভয়ের পক্ষ থেকে আইসক্রিম।
উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে আনন্দঘণ্টা
কিশোর আলোর (কিআ) জন্মদিনের সকালটা শুরু হয়েছিল রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসে। ড্যান কেকের সহযোগিতায় শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ‘আনন্দঘণ্টা’ অনুষ্ঠিত হয় এখানে। অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য, ভাষাবিষয়ক কর্মশালা, জাদু, গান আর কুইজের সমন্বয়ে জমে উঠেছিল অনুষ্ঠান।
সকালে কলেজ মিলনায়তনে শিক্ষক এবং এক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয় এই আয়োজনে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারিক মনজুর, কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হকসহ গুণীজনেরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাইদুজ্জামান রওশন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মোহাম্মদ জিয়াউল আলম কিশোর আলোকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচির বাইরেও পঠনপাঠনে অনুপ্রাণিত করেন।
তারিক মনজুর বাংলা শব্দ নিয়ে তথ্যমূলক আলোচনা করেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের প্রতিটি কাজ পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে করার আহ্বান জানান।
এ পর্যায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মঞ্চে এসে আবৃত্তি ও গান গেয়ে উপহার নিয়ে যায়। মজার মজার জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেন জাদুকর স্বপন দিনার। সংগীতশিল্পী ডি-রকস্টার শুভ সবাইকে নিয়ে ‘আমরা সবাই রাজা’ গানটি গেয়ে মিলনায়তন মাতিয়ে রাখেন।