গাড়ির ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: শিগগিরই বিচারসহ ৬ দফা দাবি সহপাঠীদের
গাড়ির ধাক্কায় সহপাঠী মুহতাসিম মাসুদ নিহত হওয়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছে, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে নির্মমভাবে তাঁদের ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পলাশীর মোড়ে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি ঘোষণা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন, বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী শৌর্য দাস ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু ওবায়দা মায়ায। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এ ঘটনায় আহত আরেক শিক্ষার্থী অমিতের কাছ থেকে যা জানতে পেরেছি তা হলো, পুলিশের সংকেত পেয়ে তাঁরা বাইক থামিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমরা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি যে, এ ঘটনায় অভিযুক্ত চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।’
লিখিত বক্তব্যে শৌর্য দাস আরও বলেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন অভিযুক্ত গাড়িচালকের পিতা একজন প্রভাবশালী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তিনি বলেন, ‘অতীতেও আমরা দেখেছি যে অপরাধী যদি প্রভাবশালী হয়, তাহলে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাঁটিয়ে, ভিকটিমের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, হুমকি-ধমকি দিয়ে, ভিকটিমের পরিবারকে মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে, প্রাথমিকভাবে মামলা হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব খাটায়, কিংবা আরও নানাভাবে ছাড় পেয়ে যায়। এটা আমরা হতে দিতে পারি না কখনোই। আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু ও অতি সত্ত্বর বিচার চাই।’
শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৬ দফা দাবি ঘোষণা করেন আবু ওবায়দা মায়ায। দাবিগুলো হলো ১. যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ। ২. আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদী-পক্ষকে বহন করতে হবে। ৩. নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে। ৪. তদন্ত কার্যক্রমে বাধাদানের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ৫. আহতদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যাপারে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি। ৬. সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারও প্রাণ যেন না যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই ব্যাপারে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম নিহত হন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন বুয়েটের আরও দুই শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান খান (২২) ও অমিত সাহা (২২) । তাঁরা সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী। পূর্বাচল ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট ((কুড়িল-কাঞ্চন সড়ক) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত মুহতাসিমের বাবা বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে রয়েছেন প্রাইভেট কারের চালক মুবিন আল মামুন (২০)। তিনি রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন ওই গাড়িতে থাকা মিরপুর পীরেরবাগ এলাকার রিজওয়ানুল করিমের ছেলে মিরাজুল করিম (২২) ও উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরী। গ্রেপ্তার তিনজনই শিক্ষার্থী।
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ডোপ টেস্টের পর আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।