গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করতে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে: নাহিদ ইসলাম

আজ মঙ্গলবার পদত্যাগ করার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ ইসলামছবি: পিআইডি

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার শক্তিকে সংহত করতে, সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে তাঁর ভূমিকা বেশি হবে। সে জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন। পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক দলেও তিনি অংশ নিতে আগ্রহের কথা জানান।

আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর যমুনার সামনে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে কথা বলেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ বেলা একটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠকে তিনি তাঁর একটি ব্যক্তিগত বিষয় আলোচনা করেছেন এবং আলোচনা সাপেক্ষে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। এ ছাড়া জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনসহ সরকারের যেসব কমিটিতে তিনি ছিলেন, সেসব কমিটি থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ৮ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথমে দুজন (নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) এবং পরে আরও একজনসহ (মো. মাহফুজ আলম) মোট তিনজন অন্তর্বর্তী সরকারে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে দায়িত্ব নেন। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেই সময় দায়িত্ব গ্রহণ করা তাঁদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছিল। গত সাড়ে ছয় মাসের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কাজ করেছে, হয়তো আশানুরূপ ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাঁর কাছে মনে হয়েছে সরকার একটি স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে।

আরও পড়ুন

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন, ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন। আমরা যে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করি, সেই আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানে যে ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছে, সেই শক্তিকে সংহত করতে, আমি মনে করেছি যে সরকারে থাকার চেয়ে সরকারের বাইরে থেকে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে এবং বাইরে যে সহযোদ্ধারা রয়েছেন, তাঁরাও এটি চান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’

গত সাড়ে ছয় মাসে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টার কথা উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, দুটি মন্ত্রণালয়ের বাইরেও অনেক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে কিছু কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই কাজের ফলাফল হয়তো সামনে জনগণ পাবে। ছয় মাস খুবই কম সময়, তারপরও তিনি চেষ্টা করেছেন। তাঁর কাজ, ফলাফল জনগণ মূল্যায়ন করবে। আজকে থেকে তিনি সরকারের কোনো দায়িত্বে নেই।

ছেড়ে দেওয়া দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কে নিচ্ছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন এটি উপদেষ্টা পরিষদ ঠিক করবে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জায়গা থেকে মনে করেছি আমার বাইরে প্রয়োজন। এখনো গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়নি। বিচার ও সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে সরকার গঠিত হয়েছিল, ছাত্ররা এসেছিল, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে অন্য দুজন (মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) রয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এখনো তাঁদের সরকারে দায়িত্ব রয়েছে। এখনো সরকারে থেকে জনগণকে সার্ভ (সেবা) করবে। তাঁরা রাজনীতি করার প্রয়োজন বোধ করলে তখন হয়তো সরকার থেকে ছেড়ে (পদত্যাগ) দেবেন।’

নতুন দলে অংশ নেওয়ার জন্য পদত্যাগ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘হ্যাঁ, নতুন যে রাজনৈতিক শক্তি ও দল গঠন হচ্ছে, আমি সেখানে অংশগ্রহণ করতে আমার অভিপ্রায় আছে। জনগণের সঙ্গে মিশে আবারও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মাঠে থেকে কাজ করার লক্ষ্যে আমি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছি।’

নতুন দলের আহ্বায়ক হচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, দলটির ঘোষণা ২৮ ফেব্রুয়ারি, সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেদিনই এটি জানা যাবে।

ছয় মাসের কাজের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা থেকে পদত্যাগ করা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল। সেই সীমাবদ্ধতা কাটানোর চেষ্টা করেছি সব সময়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল। আমরা এসে আমলাতন্ত্রকে যেভাবে পেয়েছি, এখানে পুলিশের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হয়েছে আন্দোলনের পরে। একই সঙ্গে জুলাইয়ের গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাজ করেছি।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমি জনপ্রশাসনের একটি কমিটির দায়িত্বে দুই সপ্তাহের মতো ছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাঁরা ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের সরানোর ব্যবস্থা—এ রকম কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমি আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার সামনের দিনগুলোতে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে এবং দেশের যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতি এবং দ্রব্যমূল্য নিরসনে সফলতা দেখাতে পারবে।’