কূটনৈতিক উৎকর্ষের স্বীকৃতি পেলেন ঢাকায় নিযুক্ত সৌদির রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানের হাতে পদক তুলে দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতেছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্কের বিস্তৃতি, বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সৌদিতে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স মেডেল’ পেয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশে কূটনৈতিক উৎকর্ষের স্বীকৃতি হিসেবে সৌদির রাষ্ট্রদূতের হাতে এই পদকসহ সম্মাননা তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চীন, রাশিয়াসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা ছিলেন।

বিদেশি ও দেশি কূটনীতিকদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার ২০২১ সালে ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ চালু করে। ঢাকায় কর্মরত একজন বিদেশি কূটনীতিক ও বাংলাদেশের একজন কূটনীতিককে এই পদক দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইয়েদ মোহাম্মদ আল মেহরি ও জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি আগে এই পদক পেয়েছেন। আর বাংলাদেশের কূটনীতিকদের মধ্যে আগে এই পদক পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সাবেক সচিব মোহাম্মাদ খুরশেদ আলম ও পোল্যান্ডে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন।

এবার বিদেশি কূটনীতিক হিসেবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে এই পদক দেওয়া হলো। তবে বাংলাদেশের কোনো কূটনীতিককে এবার পদক দেওয়া হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিতর্ক এড়াতে এবার বাংলাদেশের কোনো কূটনীতিককে পদক দেওয়া হয়নি। এবার বাংলাদেশের কোনো কূটনীতিককে পদক দিতে গেলে শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদের ভূমিকা বিবেচনায় নিতে হতো। এ কারণে নীতিগত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ মেডেল সৌদি রাষ্ট্রদূতকে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান ঢাকায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে সৌদি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়কালে তিনি নিজেকে বাংলাদেশের একজন বন্ধু হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তাঁর ভূমিকার কারণে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পর্বেও বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল না। এই সময়টাতে সৌদি আরবে প্রায় ১৪ লাখ বাংলাদেশি কর্মী গেছেন। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সৌদি ভিসা সহজ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকায় সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিবহনমন্ত্রী ও হজমন্ত্রীর সফরসহ দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে সফর বিনিময় হয়েছে। বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’সহ বিভিন্ন সৌদি উদ্যোগে বাংলাদেশকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তৌহিদ হোসেন বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। দেশটিতে থাকা ৩০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন রয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সৌদির বিনিয়োগ এই বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ ও সৌদি আরব জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উভয় দেশ বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতির পক্ষে সমর্থন জানানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

‘বাংলাদেশ মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ পাওয়ায় সৌদির রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানান তৌহিদ হোসেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সৌদির রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ প্রদান করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ এখানের রাষ্ট্রদূতদের কাজে আরও উৎসাহিত করবে। তবে এটা শুধু আমার অর্জন নয়, আমার মিশনের সব কর্মকর্তার পরিশ্রমের ফসল।’

সৌদির রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশিদের স্বাগত জানায়। গত ৩ বছরে ২২ লাখ বাংলাদেশি কর্মীর ভিসা ইস্যু করেছে সৌদি দূতাবাস। প্রতিদিন দূতাবাস ৭ হাজার ভিসা ইস্যু করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সৌদির বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ক্ষেত্র। তাঁরা বহুমুখী সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যেতে চান।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।