জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার
জাতীয় পার্টিকে সর্বদলীয় বৈঠকে ডাকা হবে না।
বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা থাকতে পারেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার একটি সর্বদলীয় বৈঠক করা হবে। সেদিনই স্পষ্ট হবে, কবে ঘোষণাপত্রটি দেওয়া হবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আশা করি, আগামী পরশু বৃহস্পতিবার এই বৈঠকের ভেতর দিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি দলিল প্রণীত হবে। সেদিনই স্পষ্ট হবে, কবে ঘোষণাপত্রটি জারি করব এবং সরকার কীভাবে ঘোষণাপত্র জারির করার বিষয়ে ভূমিকা রাখবে।’ তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের একটি প্রেক্ষাপট-প্রত্যাশা এই ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হবে। সব রাজনৈতিক দল এবং পক্ষের মতামত নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই ঘোষণাপত্র ঘোষিত হবে।’
ছাত্রদের ঘোষণাপত্র অবলম্বনে গত ১২–১৩ দিনে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে খসড়া ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। বিএনপি, জামায়াত, নারী সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার বিষয়ে একমত আছেন। কিন্তু ঘোষণাপত্রটি কবে দেওয়া হবে এবং ভেতরে কী কী আধেয় (কনটেন্ট) থাকবে, সে বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি।
দ্বিমত কোন বিষয় নিয়ে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন, বিএনপি-জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ অধিকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিন–চার দিন আগে ঘোষণাপত্রের খসড়া পৌঁছানো হয়েছে। তারা খসড়া ঘোষণাপত্রের অধিকাংশ ধারা নিয়ে একমত। কয়েকটি ধারা নিয়ে দ্বিমত আছে। এই দ্বিমতগুলো নিয়ে তারা দলীয় ফোরামে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। নিজেরাও কিছু প্রস্তাব দিতে চাইছে।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা এখনো স্পষ্ট নই, তাদের (রাজনৈতিক দল) দ্বিমতের জায়গা কী হতে পারে। সেটা আলোচনা সাপেক্ষে জানতে পারব।’
ঘোষণাপত্র নিয়ে জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতীয় পার্টির ভূমিকা স্পষ্ট। ইতিমধ্যে কয়েকটি বৈঠকে তাদের ডাকিনি। এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ বা তাদের সঙ্গে কথা বলা যৌক্তিক মনে করছি না। প্রয়োজনও মনে করছি না।’ তিনি বলেন, বাম দলের মধ্যে তো অনেক দল আছে। যে দলগুলো গণ-অভ্যুত্থানের সহযোগী ছিল, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের সঙ্গে অবশ্যই কথা হবে।
সর্বদলীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার কথা জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘ছাত্ররা যদি সম্মতি দেয় এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এটা যদি করা যায়, তাহলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা যাবে। ঘোষণাপত্রটিও ফলপ্রসূ হবে।’
বৈঠকের স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা থাকতে পারেন।
এদিকে এর আগে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা ঘোষণাপত্রের খসড়া পেয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছ থেকে ঘোষণার খসড়াপত্র পেয়েছি। তিনি আমাদের মতামত জানাতে অনুরোধ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এক দিনের নোটিশে এটা করা সম্ভব নয়। আমরা (দলে) এ বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আরও আলোচনা করব। অন্যান্য দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। কারণ, সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, যেগুলো আমাদের দেখতে হবে।’