দেশে যে জেলায় কমেছে জনসংখ্যা
দেশের সব জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে। অথচ উল্টো ঘটনা ঘটেছে ঝালকাঠি জেলায়। গত ১১ বছরে এই জেলায় মানুষের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিবিএস বলছে, দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠিতে এখন মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৬১ হাজার ১৬১ জন। ২০১১ সালের জনশুমারিতে এই জেলায় মানুষ ছিল ৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৬ জন। মানে গত ১১ বছরে এ জেলায় ২১ হাজার ৫০৮ জন মানুষ কমেছে।
গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে (বিবিএস)। তাতে দেখা গেছে, ঝালকাঠিতে জনসংখ্যা কমার কারণে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাসের সংখ্যাও কমেছে। এই জেলায় এখন প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে ৯৩৫ জন। ২০১১ সালে ছিল ৯৬৬ জন। ঝালকাঠিতে পরিবারের আকারও কমেছে। ১১ বছর আগে সেখানে একটি পরিবারের আকার ছিল ৪ দশমিক ৩২ জন। সেটি কমে ৪ দশমিক ০৭ জনে এ নেমে এসেছে।
বিবিএসের জেলাভিত্তিক জনসংখ্যা, খানার আকার, জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
জনশুমারির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব জেলাতেই জনসংখ্যা বেড়েছে। যদিও জনসংখ্যার গড় বৃদ্ধির হার কমেছে। ব্যতিক্রম শুধু ঝালকাঠি। অবশ্য অন্য দুটি জেলায় গত ১১ বছরে জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। নাটোরে গত ১১ বছরে মানুষ বেড়েছে মাত্র এক লাখ ৫৩ হাজারের মতো। ২০১১ সালে ওই জেলায় জনসংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৬ হাজারের মতো। সেটি বেড়ে ১৮ লাখ ৫৯ হাজারে উন্নীত হয়েছে। নওগাঁ জেলায় গত ১১ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৮৪ হাজারের মতো। উত্তরের এই জেলাটিতে এখন জনসংখ্যা ২৭ লাখ ৮৪ হাজারের মতো। ১১ বছরে আগে যা ছিল ২৬ লাখ।
সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ঢাকায়, কম বান্দরবানে
জনশুমারির তথ্য বলছে, দেশে এখন সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ঢাকা জেলায়। রাজধানীতে জনসংখ্যা বেড়ে এক কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজারে উন্নীত হয়েছে। ১১ বছর আগে যা ছিল এক কোটি ২০ লাখ ৪৩ হাজারে। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাসের সংখ্যাও বেড়েছে। এখন রাজধানীতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে ১০ হাজার ৬৭ জন। ১১ বছর আগে যা ছিল আট হাজার ২২৯ জন। তবে ঢাকায় পরিবারের আকার কমেছে। এখন ঢাকায় একটি পরিবারের আকার ৩ দশমিক ৬৫ জন। যা আগে ছিল ৪ দশমিক ৩২ জনে।
এদিকে জনসংখ্যা সবচেয়ে কম বান্দরবান জেলায়। এই জেলায় এখন জনসংখ্যা চার লাখ ৮১ হাজার ১০৯ জন। যা আগে ছিল তিন লাখ ৮৮ হাজার ৩১৬ জন। পার্বত্য এই জেলায় জনসংখ্যার ঘনত্বও কম। প্রতি বর্গকিলোমিটারে সেখানে মাত্র ১০৭ জনের বসবাস। জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে কম রাঙামাটিতে। এই জেলায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০৬ জন মানুষের বসবাস।
পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি সিলেট জেলায়, কম জয়পুরহাটে
একটি পরিবারে সদস্যসংখ্যা সবচেয়ে বেশি এখন সিলেট জেলায়। এই জেলায় গড়ে একটি পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ দশমিক ১৬ জন। যেখানে জাতীয়ভাবে খানার আকার ৪ জন। পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশির দিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে সুনামগঞ্জ ৫ দশমিক ১০ জন, হবিগঞ্জ চার দশমিক ৮০ জন।
অন্যদিকে পরিবারের আকার সবচেয়ে কম জয়পুরহাটে। এই জেলায় পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিন দশমিক ৫৪ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে মেহেরপুর ৩ দশমিক ৬১ জন। বগুড়া ৩ দশমিক ৬৪ জন।
জনসংখ্যা বেশি যে পাঁচ জেলায়
সর্বোচ্চ জনসংখ্যার পাঁচটি জেলা হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল। ঢাকায় এখন জনসংখ্যা এক কোটি ৪৭ লাখ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রামের জনসংখ্যা এখন ৯১ লাখ ৬৯ হাজার। আগে ছিল ৭৬ লাখ। কুমিল্লায় এখন জনসংখ্যা ৬২ লাখ ১২ হাজার। আগে ছিল ৫৩ লাখ ৮৭ হাজার। ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরে এখন জনসংখ্যা ৫২ লাখ ৬৩ হাজার। ১১ বছর আগে ছিল ৩৪ লাখ তিন হাজার। টাঙ্গাইলে এখন জনসংখ্যা ৪০ লাখ ৩৭ হাজার। আগে ছিল ৩৬ লাখ।
জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি যে পাঁচ জেলায়
জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ঢাকা জেলায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস। দশ হাজার ৬৭ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে নারায়ণগঞ্জ। এই জেলায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে পাঁচ হাজার ৭১২ জন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা গাজীপুরে বসবাস করছে দুই হাজার ৯৭৪ জন। নরসিংদীতে দুই হাজার ২৪৭ জন এবং কুমিল্লায় এক হাজার ৯৭৪ জন।
বিবিএস জানিয়েছে, জনশুমারির এই প্রতিবেদন প্রাথমিক। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসকে দিয়ে শুমারি পরবর্তী যাচাই জরিপ করা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
চলতি বছরের ১৫ জুন থেকে ২১ জুন দেশজুড়ে জনশুমারি পরিচালনা করে বিবিএস। বন্যার কারণে চারটি জেলায় ২৮ জুন পর্যন্ত শুমারি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে এখন জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। যদিও জনসংখ্যার এই তথ্য নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।