রমনায় বোমা হামলা মামলা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন চলছে
দুই যুগ আগে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন চলছে। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানিতে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানির দিন রাখা হয়েছে।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়। ঘটনাস্থলেই নয়জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। এ ঘটনায় করা মামলা রমনায় বোমা হামলার মামলা হিসেবে পরিচিতি পায়। হত্যা মামলায় পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল ২০১৬ সালে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে প্রথম শুনানির জন্য ওঠে। শুনানিও শুরু হয়। পরে কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ নিয়ে আলোচিত এই মামলায় আট আসামির ডেথ রেফারন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় উঠলেও শুনানি শেষে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টের ওই দ্বৈত বেঞ্চে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর কার্যতালিকায় ওঠে। পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু হয়।
আদালতে আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও সরওয়ার আহমেদ এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান।
আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছে জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী প্রথম আলোকে বলেন, শুনানি শেষ পর্যায়ে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সরওয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন প্রায় শেষ পর্যায়ে। পলাতক আসামিদের পক্ষে আগামীকাল রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীর বক্তব্য উপস্থাপনের কথা রয়েছে।
রাজধানীর রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। এই রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়া অন্য আসামিরা হলেন—আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান।
সিলেটে গ্রেনেড হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডিতরা হলেন শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে আসে, যা ২০১৪ সালে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এরপর শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন।