ঘেরাও কর্মসূচির আগে নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার সকাল ১০টায়
ছবি: জুয়েল শীল

‘গলাকাটা’ গৃহকর বাতিলের দাবিতে আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় (নগর ভবন) ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। এই কর্মসূচির আগে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরের টাইগারপাসে অবস্থিত নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। আগে কখনো এভাবে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা দেওয়ায় সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে নগর ভবনে ঢুকতে পারেননি। আবার কেউ কেউ ভেতরে ঢুকে আটকে পড়েন।

প্রধান ফটকে তালা দেওয়ায় সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও আজ অফিসে ঢুকতে পারেননি। তাঁদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ নিয়ে ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের জানিয়ে দেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে।

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচির কারণে প্রধান ফটকে তালা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের অফিস শুরুর সময় সকাল ৯টা। এখন থেকে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে হাজির থাকতে হবে। আজ থেকে এই নিয়ম কার্যকর করতে প্রধান ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে।

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলে খালেদ মাহমুদ বলেন, কর নির্ধারণে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নেই। আইন অনুযায়ী সাত বছর আগে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু গত বছরের শুরুতে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

নগর ভবনের আশপাশের এলাকাসহ কর্মসূচি শুরুর স্থানে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে
ছবি: জুয়েল শীল

নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকাসহ কর্মসূচি শুরুর স্থান কদমতলীতে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
তবে নগরের খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচির জন্য বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। সামনে মহান স্বাধীনতা দিবস। বিশেষ বিশেষ দিন ঘিরে পুলিশের বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। এটাও তাই।

সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সময় ২০১৭ সালে কর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছিল। পুনর্মূল্যায়নের পর নগরের বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয় ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পুরোনো নিয়মে তা ছিল ৩৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। নতুন কর পুনর্মূল্যায়নের পর সরকারি খাতের করদাতা প্রতিষ্ঠান দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৪৭টি। এর বিপরীতে বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয় ২৮০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান দাঁড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৭০০। বিপরীতে বার্ষিক কর ধরা হয় ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

স্থাপনার আয়তনের পরিবর্তে ভাড়ার ভিত্তিতে এই কর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। এর বিরুদ্ধে করদাতা সুরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন তখন আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে এই কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম আর বাস্তবায়িত হয়নি। গত ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত জুলাই থেকে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন। এখন তা আদায়ের কার্যক্রম চলছে।