বিদায়ী বছরে ৩৬৫ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন, আর খুন হয়েছেন ২ জন। এ ছাড়া ৫৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ জন।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি-২০২৩’ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার এইচআরএসএস সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এইচআরএসএসের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা ৫৮ মামলায় ১৮৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬০ জন।
দেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের এই মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
২০২৩ সালে ৯৩৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে এইচআরএসএস বলছে, এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৬ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯ হাজার ২৫৮ জন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল, নির্বাচনী সহিংসতা এবং বিএনপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের পাল্টা শান্তি সমাবেশকেন্দ্রিক সংঘর্ষে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ৮ হাজার ৫৫৬ রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪৫৬টি মামলায় ১৪ হাজার ৪০০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৫৮ হাজার ৯৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
নির্বাচনী সহিংসতার ২৫৬টি ঘটনায় ৯ জন নিহত হওয়ার কথাও জানিয়েছে এইচআরএসএস। সংগঠনটি বলছে, ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনী সহিংসতার ১৮৭টি ঘটনায় ৫ জন নিহত ও কমপক্ষে ৯০২ জন আহত হয়েছেন।
২০২৩ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম থেমে নেই বলেও উল্লেখ করা হয় এইচআরএসএসের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, ২০২৩ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে ৭ জন কথিত বন্দুকযুদ্ধে, ৭ জন নির্যাতনে এবং ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৫ জন মারা যান। এ ছাড়া কারা হেফাজতে ৮৪ জন মারা গেছেন। শুধু ডিসেম্বর মাসেই কারা হেফাজতে ১৫ জন মারা যান। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ৮ জন রয়েছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৩৬১ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৯০ জন। এর মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ৫৫৭ জন শিশু (বয়স ১৮ বছরের কম)। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে ১৯২ জন (১৯%) নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জনকে। বিদায়ী বছরে ৭০২ জন নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৯৪ জনই শিশু। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৩ নারী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২৯৯ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১১৮ নারী। অ্যাসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯ নারী, যাঁদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন।