ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে যেসব প্রস্তাব দিল ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংশোধনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৭টি প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এতে বয়সসীমা তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে সংস্কার প্রস্তাব পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। প্রস্তাবে উঠে আসে—নির্বাচনে প্রার্থীদের বয়সসীমা সুনির্দিষ্টভাবে ৩০ বছর না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ‘ভোটার ও প্রার্থী’ হওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব; উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে, সহ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ডিন, সিন্ডিকেট, অ্যাল্যামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডাকসুর নির্বাচিত সহসভাপতিকে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন; ডাকসুর সভাপতি পদে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসার প্রস্তাব; নারী শিক্ষার্থীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য মোট দুটি সহসভাপতি এবং দুটি সহসাধারণ সম্পাদক পদে আলাদা নির্বাচনের প্রস্তাব।
এ ছাড়া ডাকসুর নির্বাহী কমিটিতে মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক, জেন্ডারসমতা ও অন্তর্ভুক্তিবিষয়ক, গবেষণা ও উন্নয়নবিষয়ক এবং কর্মসংস্থান ও সক্ষমতা বৃদ্ধিবিষয়ক সম্পাদকের পদ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রদল।
ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ পদটিতে উপাচার্যের একজন শিক্ষক মনোনয়নের নিয়ম পরিবর্তন করে অর্থ সম্পাদক পদে সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদানের সুযোগ; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদকে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও ২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানবিষয়ক সম্পাদকে রূপান্তরকরণ; ডাকসুর নির্বাহী কমিটিতে ১৩টি পদ বর্ধিতকরণ ও প্রত্যেক সম্পাদকের সঙ্গে ডেপুটি সম্পাদক নিয়োগের বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
ছাত্রদলের হল সংসদ নিয়ে প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, হল সংসদে সভাপতি পদে প্রাধ্যক্ষকে বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সরাসরি সভাপতি পদে নির্বাচনের প্রস্তাব। তা ছাড়া কোষাধ্যক্ষ পদের পরিবর্তে নির্বাচিত অর্থ সম্পাদক প্রণয়নের প্রস্তাব; হল সংসদে প্রাধ্যক্ষ, দুজন হাউজ টিউটর, অ্যালামনাই সোসাইটির সভাপতি ও হল সংসদের নির্বাচিত সভাপতিকে নিয়ে হল উপদেষ্টা পরিষদ গঠন।
এর আগে বর্তমান সিন্ডিকেটের অধীনে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের বিরোধিতা করে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রদল। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান সিন্ডিকেটের অধীনে ডাকসু নির্বাচনসহ যেকোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে ’২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবেগ ও চেতনার সম্পূর্ণরূপে পরিপন্থী।
এমন প্রেক্ষাপটে সাময়িকভাবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল। প্রস্তাবগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ সংশোধন করা; নির্বাচনের কমপক্ষে ৬০ দিন আগে বিদ্যমান সিন্ডিকেট প্রতিস্থাপন করে নিরপেক্ষ সদস্যসংবলিত একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সিন্ডিকেট’ তৈরি করা; আবাসিক হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনগুলোতে ভোটকেন্দ্র তৈরি করা; নির্বাচনের কমপক্ষে ৩০ দিন আগে ভোটার তালিকা প্রকাশ ও চূড়ান্ত করা এবং এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ আপিল প্রক্রিয়া রাখা; ডাকসু ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট তৈরি করা।