বঞ্চিত ৭৬৪ সাবেক কর্মকর্তা ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি পাবেন

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আজ ঢাকার তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। সেই সভায় এ–সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ছবি: পিআইডি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে পদোন্নতি বঞ্চিত উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত ৭৬৪ জন সাবেক কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মাধ্যমে তাঁদের পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে। এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছিল সরকার গঠিত একটি কমিটি।

আজ মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত রেখে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি সুপারিমালা দিয়েছিলেন। এর আলোকে এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি করা হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক কর্মকর্তার ‘প্রযোজ্য’ তারিখ থেকে পদোন্নতির আদেশ জারি করা যেতে পারে। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি বাস্তবায়নে বকেয়া বেতন, আনুতোষিক, পেনশন বাবদ এককালীন আনুমানিক ৪২ কোটি টাকা এবং পরে পেনশন বাবদ বার্ষিক অতিরিক্ত ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে। এটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সরকারি চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এ সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক অর্থসচিব এবং বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খান। কমিটি ১০ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়।

কমিটির কাছে মোট ১ হাজার ৫৪০টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের করা ১৯টি আবেদন ছিল। যাচাই–বাছাই করে কমিটি সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড)–এ ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপসচিব পদে চারজনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছিল। যেহেতু তাঁরা অবসরে গেছেন, সে জন্য তাঁদের ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছিল কমিটি। ওই ৭৬৪ কর্মকর্তার মধ্যে কমিটি ৯ জনকে চার ধাপ, ৩৪ জনকে তিন ধাপ, ১২৬ জনকে দুই ধাপ ও ৫৯৫ জনকে এক ধাপ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এখন সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

আরও পড়ুন
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। আজ মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর
ছবি: পিআইডি

গণভবনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে। এ বিষয়ে এর আগেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল সরকার। গণভবনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ বাস্তবায়ন কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন লেখক ও গবেষক এবাদুর রহমান।

‘শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ হবে, সেটা আগে বা পরে হোক’

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনার বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আরও বিস্তারিত কাজ সামনে দেখা যাবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। উনি (শেখ হাসিনা) একটা চোরতন্ত্র এখানে জারি করেছিলেন। এই চোরতন্ত্রে কারা কারা তাঁর সঙ্গে মহাচুরিতে জড়িত ছিলেন, ‘এটা বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায়। এটি জানানো সরকারের একটি নৈতিক দায়িত্ব। উনি কী পরিমাণ চুরি করেছেন, সেটি অবশ্যই জানানো হবে। খুব গুরুত্ব দিয়ে সরকার এটি তদন্ত করছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে ‘স্বৈরাচার জননী’ অনেক ধরনের উন্নয়নের গল্প করেছেন; কিন্তু ১৫ বছরে অর্থনীতি ছিল সস্তা শ্রমের ওপর। দেশে সস্তা শ্রম বিক্রি করা হয়েছে, বিদেশে সস্তা শ্রম রপ্তানি করা হয়েছে। অথচ উন্নয়নের অনেক বড় বড় গল্প শোনা গেছে।

শেখ হাসিনাকে কবে নাগাদ ফেরত আনা সম্ভব, এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এখান থেকে আইনি প্রক্রিয়া (লিগ্যাল প্রসেস) জোরেশোরে করছে সরকার। রুলস অব ল (আইনের শাসন) যদি মানতে হয়, আইনি প্রক্রিয়াগুলোকে তার সময়টা দিতে হবে। ইচ্ছা করলেই আইনি অনেক কিছু খুব দ্রুত করা যায় না। যতটা দ্রুত সম্ভব, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ায় যতটুকু সম্ভব, সরকার সে অনুযায়ী কাজ করছে।

সরকার বারবার বলেছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চায় এবং সে অনুযায়ী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ বিষয়ে কথা বলেছেন উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, তিনি আশা করেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ হবে; সেটি আগে বা পরে হোক। শেখ হাসিনা বিচারের সম্মুখীন হবেন।

আরও পড়ুন